ইউক্রেন রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ তাড়াতাড়ি থামবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের খাদ্য সংকট যাতে না হয় সেজন্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর আবারও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১২ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’ থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা)। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আমাদের ডিজেল কিনতে হয়। এলএনজি কিনতে হয়। সার কিনতে হয়। বিভিন্ন পণ্য এমনকি তেল আনতে হয়, গম আনতে হয়। অতএব আমি অনুরোধ করব যে, আমাদের নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং জাতিসংঘে কিছু পণ্য আমরা আনতে পারব। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি। যেমন- কানাডা থেকে যাতে আমরা গম আনতে পারি। এখন আমরা রাশিয়া, ইউক্রেন ও বাবেলারস থেকে সব পণ্য আনতে পারব।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের জেনারেল সেক্রেটারি একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাতে আমরা আছি। আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে পেরেছি। কিন্তু পণ্যের দাম যেমন বেড়েছে পরিবহনের খরচও অতিরিক্ত বেড়েছে। তারপরও কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া আমরা অব্যাহত রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন জাতিসংঘে ছিলাম বা লন্ডনে গেলাম রানী এলিজাবেথ অন্তোষ্টিক্রিয়ায়, অনেক দেশ ও সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে। সবার মাঝে একটা উদ্বেগ- সেটা হলো ২০২৩ সালে সারা বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। খাদ্য মন্দা দেখা দিতে পারে। সবাই চিন্তিত, আমি উন্নত দেশগুলোর কথা বলছি। বাংলাদেশে আমাদের মাটি ও মানুষ আছে। আমাদের এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে যেন এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি না হয়।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ তাড়াতাড়ি থামবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পণ্য আমরা উৎপাদন করব। কারণ এই যুদ্ধ এত তাড়াতাড়ি থামবে বলে মনে হয় না। মনে হয় অস্ত্র বিক্রি করতে পারেনি এমন যেসব দেশ এই একটা ব্যবসা করে তারা লাভবান হয়। এই যুদ্ধ চালিয়ে রাখতে পারলে কিছু দেশ তো নিজের লাভবান হবে, কিন্তু সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সেজন্য আমি জানিয়েছি যুদ্ধ বন্ধ করেন। শিশুদের জন্য খাদ্য ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেই আহ্বানই করেছি।
বিশ্বে খাদ্য চাহিদা বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেহেতু আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, এখন এই খাদ্য নিশ্চয়তা দিতে হবে। তার জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। খাদ্য চাহিদা কখনো কমবে না। খাদ্য চাহিদা বিশ্বে বাড়বে। বরং যুদ্ধের কারণে অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। হয়তো আমাদেরকেই খাদ্য সাহায্য তাদের পাঠাতে হবে। উৎপাদনের দিকে যদি আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেই সেটাই ভালো হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হতে হবে কৃষিকে। আমরা আরও আধুনিক করতে চাই। জাতির পিতা সেই উদ্যোগে নিয়েছিলেন। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব- এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষেই আমরা এগিয়ে যাব। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, ইনশা-আল্লাহ উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পাবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। অনুষ্ঠানে কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে অবদান রাখার জন্য কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাসহ ৪৪ জনকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়।