মাতামুহুরী নদী বেষ্টিত চকরিয়ার ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এ জনপদের আড়াই লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী এই সাংগঠনিক উপজেলাকে প্রশাসনিক ভাবে পুর্নাঙ্গ উপজেলা হিসেবে বাস্তবায়ন প্রাণের দাবী হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হিসেবে রাষ্ট্রের অবদান রেখে যাচ্ছেন কক্সবাজারের মাতামুহুরী অঞ্চলের সাতটি ইউনিয়ন। এদিকে, বিগত ১৬ বছর ধরে চকরিয়া উপজেলা থেকে পৃথকভাবে মাতামুহুরী উপজেলা বাস্তবায়নের দাবীতে ইতিপূর্বে, নানা ধরণের সভা, সমাবেশ, ব্যানার, ফেস্টুন ও মিছিল মিটিং অব্যাহত রেখেছেন বিভিন্ন সংগঠন। সুবিধা বঞ্চিত এলাকাটি উন্নয়নে ও মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কক্সবাজার জেলার অন্যতম বৃহৎ জনপদ মাতামুহুরীকে একটি স্বতন্ত্র উপজেলা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরদাবী জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ জনপদের ইউনিয়ন বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, ডেমুশিয়, কোনাখালী, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা ও সাহারবিল ইউনিয়ন নিয়ে ২০০৬ সালে গঠন করা হয় মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা। প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুর মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানাকে উপজেলা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার প্রয়োজন শতভাগ সবধরণের সুযোগ থাকার পরও নাগরিক সেবা পাচ্ছে না বলে দাবী করছেন সাত ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী। ইতিপূর্বে পার্শ্ববর্তী ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলাকে পুর্নাঙ্গ উপজেলা ঘোষনা করা হয়েছে। কুতুবদিয়া ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে পুর্নাঙ্গ উপজেলা গঠিত হয়। পেকুয়া ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে উপজেলা গঠিত হয়। অপরদিকে, মাতামুহুরী এলাকার আয়তন বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম উপজেলা নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার প্রায় তিনগুণ এবং জনসংখ্যার দিক থেকে ক্ষুদ্রতম উপজেলা বান্দরবানের থানচির চেয়ে চারগুণ জনসংখ্যার অধিকারী। এখানে সাদা সোনা হিসেবে খ্যাত লবণ, চিংডি জোন, সবজি এবং চকরিয়ার সুন্দবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। ভৌগোলিক ভাবে প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যময় ঘেরা মাতামুহুরী সাংগঠনিক এলাকা। দেশের মানচিত্র ঘাটলেই সহজেই বুঝা যাবে এ সাতটি ইউনিয়ন সরকারি কোষাগারে বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব দিয়ে দেশের জন্য কি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। সুবিধা বঞ্চিত উপকূলীয় মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানার জনগোষ্ঠী তাদের ভাগ্য উন্নয়নে ও মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে জেলার অন্যতম বৃহত্তম জনপদ মাতামুহুরীকে একটি স্বতন্ত্র (স্বাধীন) উপজেলা হিসেবে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরদাবী জানান স্থানীয় বাসিন্দারা । সরেজমিন জানা গেছে, মাতামুহুরী সাতটি ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ। ভৌগোলিক অবস্থান, আয়তন ও জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে হলে মাতামুহুরী উপজেলা গঠন করা এখন সময়ের দাবি। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার ও অন্যতম উপজেলা চকরিয়া। এ উপজেলার আওতায় ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা রয়েছে। বিগত ২০০৬ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরো গতিশীল এবং জোরালো করার জন্য উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন থেকে মাতামুহুরী নদীর চতুরপাশ বেষ্টিত ৭টি ইউনিয়নকে আলাদা ভাবে ভাগ করে মাতামুহুরী নদীর নামে “মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা" নামকরণ করা হয়। মাতামুহুরীর সাতটি ইউনিয়ন ৮টি মৌজা প্রায় ১৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে এবং ১৩৫টি গ্রাম নিয়ে ২০০৬ সালে এই মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা গঠন করা হয়েছিল এরই ধারাবাহিতায় সাংগঠনিক থানার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য মাতামুহুরী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করেন। জেলা ও বিভাগীয় শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এখানে রয়েছে প্রধান প্রধান ৫টি সড়ক। এছাড়াও রয়েছে হাট-বাজার ২১টি, ব্যাংক (রাষ্ট্রীয়) ২টি, বেসরকারি -১০টি (শাখা), নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ১টি, অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি (বদরখালী) ১টি, পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-বিভাগীয় কার্যালয় ১টি, সোনালী ব্যাংক ১টি, রাবারড্যাম ১টি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৫টি, খাদ্য গুদাম ১টি, ডাক বিভাগ ৭টি, ডিগ্রী কলেজ ১টি, ফাজিল মাদ্রাসা ১টি, কামিল মাদ্রাসা ১টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৪টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪টি, কওমি মাদ্রাসা ৬টি, দাখিল মাদ্রাসা ১২টি, স্বতন্ত্রসহ ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ৩টিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। মাতামুহুরী নদী বেষ্টিত সাত ইউনিয়নের মাটি প্রাকৃতিক ভাবে বেশ উর্বর। দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম "বাগগুজরা রাবার ড্যাম" বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কক্সবাজার কর্তৃক মাতামুহুরী সেচ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় নির্মিত হয়। এতে করে সেচ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় এবং এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। ফলে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য ও মাছ উৎপাদিত হয়। যার কারণেই শস্য এবং মাছের ভান্ডার খ্যাত হিসেবেও বলা হয় মাতামুহুরীকে। এখানে রয়েছে চোয়ারফাড়ির বৃহত্তম মৎস্য অবতরন কেন্দ্র ও দরবেশকাটা বিসিক অফিস। সাত ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে আঞ্চলিক মহাসড়ক, রেল লাইন। সাম্প্রতিক শুরু হওয়া সীতাকুন্ড থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক এতদ্বঞ্চলের উপকূ্লীয় তিন ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাবে। জনগণের দুয়ারে উন্নয়নের ছোয়া পৌঁছে দিতে মাতামুহুরী উপজেলা বাস্তবায়ন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়। মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নমুখী ও জনবান্ধব সরকার। সারাদেশে উন্নয়ন বাস্তবায়ন ও জনগণের দূয়ারে নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে সর্বক্ষেত্রে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করছে।