আজ শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক ১৪৩১
সাবেক বনমন্ত্রীর সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়

আমির হোসেনে বনের সর্বনাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৩০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

বেশ ক’বছর আগে বনের রাজা হিসেবে আখ্যা পেয়েছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গণি। তার বাসায় বালিশের ভিতর মিলেছিল কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। তোশকের নিচে টাকা। টাকা চালের ড্রাম, ওয়ারড্রোব, আলমারি ও বাসার ঘুপচিতেও। বিপুল টাকাসহ আটক করা হয়েছিল তাকে। মামলা দায়েরের পর ২০০৭ সালের ১৮ জুন তিনি কারাগারে যান। আদালত তাকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু বনবিভাগে এখনো তার প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। 

এই সেক্টরে  এখনো বন্ধ হয়নি দুর্নীতি ও লুটপাট। সুফল প্রকল্প, বনায়ন প্রকল্প কিংবা রাজস্ব খাতের বরাদ্দের টাকা কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। রেঞ্জ কর্মকর্তা, স্টেশন কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কর্মকর্তারা ঘুষের মাধ্যমে পোস্টিং নিয়ে জবরদখলে সরাসরি সহযোগিতার করায় সংকুচিত হচ্ছে বনভূমি। নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী এবং অভয়ারণ্য। হারিয়ে গেছে বিলুপ্ত প্রজাতির প্রায় শতাধিক প্রাণী, চরম সংকটে পড়েছে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও প্রকৃতি।

বর্তমান প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরীকে বলা হয় আওয়ামী সরকারের প্রেতাত্মা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলেও তিনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পোস্টিং বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এ কারণে বন বিভাগ আজ ধ্বংসপ্রায়। অভিযোগ, তার সিন্ডিকেটের তিনজন সদস্য হলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাবেক বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ রায় এবং ঢাকা সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক এসএম মনিরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম উত্তরের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা এস এম কায়চার।  আর এই চক্রের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক বনমন্ত্রী সাহাব উদ্দিন এবং তার ছেলে জাকির হোসেন জুমন।

বন বিভাগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পোস্টিং বাণিজ্যের মাধ্যমে সাবেক বন মন্ত্রী সাহাব উদ্দিনের আমলে অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে প্রধান বন সংরক্ষকের এই সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের নেপথ্যে নায়ক ছিলেন মন্ত্রী সাহাব উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন জুমন। বাবা মন্ত্রী হওয়ার পরই জুমন লন্ডন থেকে দেশে চলে আসেন। ঢাকায় বাবার বাসায় থেকে মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেন জুমন। মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ গ্রহণের কারণে তাকে বনবিভাগের অনেকেই জুম্মন কসাই হিসেবে চিনেন বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।

বদলী বাণিজজ্যে বৈষম্যের শিকার মাঠ পর্যায়ের একাধিক ফরেস্টার ও বন প্রহরীরা জানান, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের দোসর প্রধান বন সংরক্ষকের বিরুদ্ধে ঢাকার বন ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই প্রধান বন সংরক্ষক কৌশলে বৈঠকের মাধ্যমে সবাইকে শান্ত করেন। তাদের দাবী, এখনো পোস্টিং বাণিজ্যরে মাধ্যমে সিনিয়র ফরেস্টারদের রেঞ্জ এবং চেক পোষ্টের দায়িত্ব না দিয়ে জুনিয়র ফরেস্টার এবংজ ফরেস্ট গার্ডদের ভালো জায়গায় পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে। পোস্টিং বৈষম্য সমাধান না হলে যে কোন সময় কঠোর আন্দোলন হতে পারে বলে ধারণা করছেন মাঠ পর্যায়ের বন রক্ষকরা।

সূত্র আরো জানায়, কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী বন অঞ্চলের বিভিন্ন রেঞ্জ, স্টেশন ও বিভাগীয় বনবিভাগকে বনভূমি অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে ভাগ করা থাকে। দুই বছরের জন্য প্রথম শ্রেণীর বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার পোস্টিংয়ের জন্য ১৫ লাখ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর রেঞ্জ কর্মকর্তার পোস্টিংয়ের জন্য জন্য ১০ লাখ ও তৃতীয় শ্রেণীর রেঞ্জ কর্মকর্তার পোস্টিংয়ের জন্য নেয়া হয় ৫ লাখ টাকা।

এছাড়াও এক বছর প্রথম শ্রেণীর চেকপোস্টে স্টেশন কর্মকর্তা পোস্টিংয়ের জন্য ২০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর চেকপোস্টে স্টেশন কর্মকর্তা পোস্টিংয়ের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণীর চেকপোস্টে স্টেশন কর্মকর্তাদের পোস্টিংয়ের জন্য নেওয়া হয় ৫ লাখ টাকা। দুই বছরের জন্য প্রথম শ্রেণীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পোস্টিংয়ের জন্য ৫০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পোস্টিংয়ের জন্য ৩০ লাখ টাকা ও তৃতীয় শ্রেণীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের পোস্টিংয়ের জন্য নেওয়া হয় ২০ লাখ টাকা করে।

শুধু পোস্টিং বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ নেই এই সিন্ডিকেট। বদলী নীতিমালা অনুযায়ী স্টেশন পোস্টিংয়ের এক বছর ও রেঞ্জ এবং বিভাগীয় কর্মকর্তার পোস্টিংয়ের দুই বছর মেয়াদ শেষ হলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্য। নির্দিষ্ট মেয়াদ পেরিয়ে গেলে নতুন পোস্টিং না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে রেঞ্জ কর্মকর্তা, চেক স্টেশন কর্মকর্তা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোহারা দিতে হয় বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তারা।

এদিকে, বিপুল কৃষ্ণ দাসের বদলির আদেশ হাতে আসার আগে গত ২৫ জুলাই কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি তার নিজস্ব বলয়ের প্রায় ডজন খানেক ফরেস্টারকে লোভনীয় পদে পোস্টিং দেন। তার মধ্যে দশ জনের তালিকা এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। তাদের মধ্যে উপকূলীয় বনবিভাগের ফরেস্টার মোঃ মোজাম্মেল হক সরকারকে লামা বনবিভাগ, ফরেস্টার এইচ এম জলিলুর রহমানকে বান্দরবান বনবিভাগ, খন্দকার আরিফুল ইসলামকে লামা বনবিভাগ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের মোঃ আরিফুল ইসলামকে পাল্পউড বনবিভাগ, আশরাফুল ইসলামকে লামা বনবিভাগ, ফরেস্টার মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদকে ব্যবহারিক বন বিভাগ, পাল্পউড বন বিভাগের ফরেস্টার অভিজিত কুমার বড়ুয়াকে ব্যবহারিক বন বিভাগ, ব্যবহারিক বন বিভাগের ফরেস্টার মোঃ রাফি উদ দৌলা সারদারকে বান্দরবান বনবিভাগ এবং লামা বনবিভাগের ফরেস্টার এস এম রেজাউল ইসলামকে চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগে পোস্টিং দেওয়া হয়।

বনবিভাগের বদলী নীতিমালা ২০০৪ অনুযায়ী, চেক স্টেশনে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এক বছর, রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এক কার্যালয়ে দুই বছর জন্য দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে। অভিযোগ আছে, কোন কোন চেক স্টেশনে এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত বদলী নীতিমালা বহির্ভূত অতিরিক্ত সময়ের মাসোহারা দিয়ে দায়িত্ব পালন করেন কর্মকর্তারা। যদিও চেকস্টেশনের কর্মকর্তাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের বেলায় এক বছরের বদলী নীতিমালার দোহাই দিয়ে বদলী করা হয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই। বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের এসব লোভনীয় পোস্টিংয়ের মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগ,চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ, চট্টগ্রাম বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগ, বান্দরবান পাল্পউড বন বিভাগ, বান্দরবান বন বিভাগ, লামা বনবিভাগ। রাঙ্গামাটি অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগ, জুম নিয়ন্ত্রণ বনবিভাগ, ইউএসএফ বনবিভাগ ও খাগড়াছড়ি বনবিভাগ।

চেকস্টেশন কর্মকর্তাদের লোভনীয় পোস্টিয়ের মধ্যে রয়েছে, কুমিল্লা সামাজিক বনবিভাগের সুয়াগাজী ফরেস্ট চেক স্টেশন। খাগড়াছড়ি বনবিভাগের রামগড় ফরেস্ট চেক স্টেশন। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নলবিলা ফরেস্ট চেক স্টেশন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের পদুয়া ও বড়দোয়ারা ফরেস্ট চেক স্টেশন। চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের রাউজান ঢালা চেক স্টেশন, হাটহাজারি ফরেস্ট চেক স্টেশন, ফৌজদার হাট ফরেস্ট চেক স্টেশন, করের হাট চেক স্টেশন ও ধুমঘাট ফরেস্ট চেক স্টেশন। ঢাকা সামাজিক বনবিভাগের সোনারগাও ফরেস্ট চেক স্টেশন। টাঙ্গাইল বনবিভাগের করটিয়া ফরেস্ট চেক স্টেশন। রাঙ্গামাটি অঞ্চলের দক্ষিণ বনবিভাগের কাপ্তাই জেটি ঘাট চেক স্টেশন, ঘাগরা ফরেস্ট চেক স্টেশন ও সুবলং ফরেস্ট চেক স্টেশন। 

রেঞ্জ কর্মকর্তাদের লোভনীয় পোস্টিংয়ের মধ্যে রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভগের সদর রেঞ্জ। রাঙ্গামাটি বন বিভাগের সবগুলো রেঞ্জ। ঢাকা সামাজিক বনবিভাগ সদর রেঞ্জ। টাঙ্গাইল সদর রেঞ্জ। ময়মনসিংহ ভালুকা রেঞ্জ। ঢাকা বনবিভাগের কালিয়াকৈর রেঞ্জ ও শ্রীপুর রেঞ্জ। সুন্দরবন অঞ্চলের খুলনা রেঞ্জ, সাতক্ষীরা রেঞ্জ, চাদপাই রেঞ্জ ও শরণখোলা রেঞ্জ। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ঈদগাহ রেঞ্জ ও ফুলছড়ি রেঞ্জ। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ, হোয়াইক্যং রেঞ্জ, উখিয়া রেঞ্জ ও রাজাপালং রেঞ্জ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের পটিয়া রেঞ্জ, রাঙ্গুনিয়া ও শহর রেঞ্জ। চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সবগুলো রেঞ্জ। চট্টগ্রামের চুনতি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ ও বাশখালী বণ্যপ্রাণী রেঞ্জ। ঢাকা বণ্যপ্রাণী বিভাগের ভাওয়াল রেঞ্জ ও জাতীয় উদ্যান রেঞ্জ। নোয়াখালীর সকল উপকূলীয় রেঞ্জ। 

এদিকে  চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের উপ বন সংরক্ষক এস এম কায়চারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পত্তি অর্জন ও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। 

হাজীপাড়া গ্রামের ইমাম বাড়ি এলাকায় তার বাড়ি। তার পিতা নুরুল কুদ্দুস পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু শিক্ষক পিতার আদর্শ ধরে রাখতে পারেননি এস এম কায়চার। টাকা কামানোর নেশায় তিনি বুঁদ হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হাছান মাহমুদের এলাকার লোক পরিচয়ে রাতারাতি পদোন্নতি বাগিয়ে নেন তিনি। ২০০১ সালে ফরেস্ট অফিসার পদে যোগদান করে তিনি এখন উপ বন সংরক্ষক।

হাছান মাহমুদ পরিবেশ ও বন মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ডিএফও পদে পদোন্নতি পান এস এম কায়চার। তার পরেই যেন পেয়ে যান আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। নামে বেনামে গড়ে তুলেন সম্পত্তির পাহাড়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়ায় তার নামে রয়েছে দেড় কানি জমি (৬০ শতক), যার মূল্য এক কোটি টাকা। ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে ফ্ল্যাট, যার মূল্য এক কোটির ওপরে। চট্টগ্রাম কল্পলোক আবাসিকে রয়েছে তার তিনতলা বাড়ি। স্ত্রী সন্তানদের নামে বেনামে রয়েছে ব্যাংক ব্যালেন্স ও সম্পত্তি। 

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হাছান মাহমুদ ও তার ভাই রাঙ্গুনিয়ায় বনবিভাগের বিশাল জমি দখল করে নেন। তার সহযোগিতায় ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এস এম  কায়চার। অভিযোগ উঠেছে, দখলবাজিতে সহযোগিতার জন্য তাকে ভোলা থেকে চট্টগ্রামে বদলী করে আনেন হাছান মাহমুদ। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের ছোট ভাই এরশাদ মাহমুদের দখল থেকে ২০০ একর বনবিভাগের জমি উদ্ধার করা হয়। যেখানে অবৈধভাবে মহিষের চারণভূমি, গয়াল পালন, মাল্টা ও কাজুবাদাম বাগান, মাছের খামার, পার্ক, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন তিনি। 

অভিযোগ উঠেছে, উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এস এম কায়চারের সহযোগিতায় এরশাদ মাহমুদ বেশির ভাগ বনভূমি দখল করেন। বন বিভাগের একরের পর একর জমি জোর করে দখল করে সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। এস এম কায়চার সবকিছু জানলেও কোন ব্যবস্থাই নেননি। এই বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য এস এম কায়চারকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেনি। হোয়াটসএ্যাপে এসএমএস করা হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি। বক্তব্য নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন সংরক্ষক ড. মোল্যা রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অফিসে যেতে বলেন। হোয়াটসএ্যাপে লিখিত আকারে প্রশ্ন দেওয়া হলে তিনি পরদিন অফিসে যেতে বলেন এবং বলেন আগে বুঝতে হবে আপনার বক্তব্য। 

এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ও তার ছেলে জাকির হোসেন জুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতপূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা ইউনিট। গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আরও দুইজনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের পর অর্ন্তর্বতী সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর পতিত সরকারের সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ও তার ছেলে জাকির হোসেন জুমনের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে সোর্স হিসেবে আমলে নিয়ে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগগুলো অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট। 

অভিযোগটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ায় সংস্থাটির দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল অভিযোগটির পরবর্তী কার্যক্রম (প্রকাশ্যে তদন্ত) গ্রহণের জন্য গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিবেদনসহ মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর চিঠি দিয়েছেন। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) আকতারুল ইসলাম জানান, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গোয়েন্দা ইউনিট সাবেক এই মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আরও দুইজনের দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরীর সাথে বুধবার বেলা আড়াইটায় মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি একটি জরুরি সভায় অংশ নিতে মন্ত্রণালয়ে ঢুকছেন। উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে অনেক  সময় লাগবে। সভার পর বিকেল পাঁচটায় তিনি এ প্রতিবেদককে ফোন করতে বলেন। তবে এরপর তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি, ফোনব্যাকও করেননি। 

প্রধান বন সংরক্ষকের দুর্নীতির বিষয়ে সরকার অবগত আছে কি না এবং এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে- এই প্রশ্ন ছিলো বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে। বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে তিনি বলেন, সরকারের অনেকের বিরুদ্ধেই অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। অনেকের নামেই অভিযোগ আসে। কিন্তু অভিযোগ এলেই তো আর প্রমাণ হয়ে যায় না। আর সব অভিযোগ যে সত্য, তাও তো নয়। সরকারের একটা প্রসিডিউর আছে। সেটা অনুযায়ী, তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়। আমি স্পেসিফিক কোনো ব্যক্তির বিষয়ে কথা বলতে চাইছি না, শুধু বলবো, অভিযোগ থাকলে দুএকটা প্রমাণসহ আমাকে জানান।