বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছে সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দক্ষতার সঙ্গে তা পালনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। যার কারণে বিদায় বেলায় সাধারণ মানুষ ও অফিসের বিভিন্ন সহকর্মীসহ সকলেই তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বিদায় বেলায় চোখে ছিলো পানি, তবুও স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে সহকর্মী ও উপজেলার সকলের কাছ থেকে বিদায় নিলেন ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ ।
রবিবার (৯জানুয়ারী) বিকেলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র সরকারি বাসভবন থেকে বিদায় বেলায় দেখা গেলো এমন হৃদয় বিদারক চিত্র।
বিদায় কালে ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ভালো থাকুক চকরিয়া উপজেলার প্রতিটি মানুষ। আমার কর্মজীবনে সেরা সঞ্চয় পেয়েছি আপনাদের ভালোবাসা। সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে পদোন্নতি ও বদলিজনিত কারণে কোনো জেলায় বা উপজেলায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় সহকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনেক রকমের সসহযোগিতা আমি পেয়েছি। কাজ আদায় করার জন্য হয়তো কারো বিরাগভাজন হয়েছি। অনেক সময় ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচক ভাবে মানুষকে উপস্থাপন করা হয়। খোলা চোখ দিয়ে সবকিছু দেখা যায় না। চোখের আড়ালেও অনেক কিছু থাকে। তবে নিজের অজান্তেও যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, কারো প্রতি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
জানা যায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল চকরিয়ার ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। এর আগেও তিনি ৭টি উপজেলায় ইউএনও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৩০ তম বিসিএস ক্যাডারের এ কর্মকর্তা দেশের বেশ কয়েকটি উপজেলা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মাঠ প্রশাসনে যোগদান করেন। গত ২৬ অক্টোবর ২০২১ ইং তারিখ পদোন্নতি পেয়ে নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরে মন্ত্রনালয়ের অপর এক প্রজ্ঞাপনে ৫ জানুয়ারী ২০২২ ইং তারিখ চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন এর রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে তাকে পদায়ন করা হয়।
বলা যায়, তিনি ইউএনও হিসেবে চকরিয়ায় কখনো সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেননি। তিনি সকলকে নিজের আপন মানুষ ভেবে কাজ করেছেনে এবং সেটা সবার চোখেও পড়েছে। দীর্ঘ দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে কেবল প্রশংসিত হয়েছেন তা নয়, কখনও মানবিক কাজের ক্ষেত্রে হয়েছেন আলোচিতও তিনি। তবুও মানবতার ক্ষেত্রে চুল পরিমাণ ঘাটতি রাখেননি এই ইউএনও। এর আগে উপজেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের সংগঠন এবং বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বিদায় সংবর্ধনা জানান তাকে।
সৈয়দ শামসুল তাবরীজ যোগদান করার পর থেকেই সরকারি সেবা সর্বসাধারণের দুয়ারে পৌছিয়ে দিতে নিজেকে নিবেদন করেছেন। গত দুই বছরে তিনি তার কর্মের দ্বারা চকরিয়ার সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করেছেন। বিশেষ করে করোনা মহামারির ভীতিকর পরিস্তিতিতেও তিনি উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে ছুটে গেছেন সরকারি সাহায্য নিয়ে। বাড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের প্রতি মানবিকতার হাত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দরজা সত্যিকার অর্থেই উন্মুক্ত ছিলো সকলের জন্য। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে তিনি একজন সজ্জন, পরোপকারি ব্যক্তি হিসেবে অল্প সময়ে পেয়েছেন পরিচিতি। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করেছেন। ঘুর্ণিঝড়, বন্যা সহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন তিনি। এছাড়াও তিনি দৃষ্টান্ত হিসেবে চকরিয়ার মানুষের বিনোদনের জন্য সৃষ্টি করে গেছেন " নিভৃত নিসর্গ " নামে মানিকপুরে পর্যটন স্পট। যার কর্মদক্ষতা, মানবিকতা, কর্মে ও আন্তরিকতায় ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজের বিদায়বেলায় উপস্থিত বেশির ভাগ শুভকাংখী মানুষের চোখেই ছিলো জল। আবেগ থামাতে না পেরে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ।