আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

৬ লক্ষ মানুষের সুপেয় পানির সংকট মেটাবে প্রাকৃতিক জলাধার

ইমাম খাইর, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৬:১৭:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

 

অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্রভাবে পুকুর-খাল-বিল-জলাশয় ভরাট, বেপরোয়া পাহাড় কর্তনসহ নানা কারণে কক্সবাজারের সর্বত্র সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানি দিনদিন ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। অনেক গভীরে গিয়েও নলকূপে পানি মিলছে না। জেলা শহরসহ ৯ উপজেলার ৭২ ইউনিয়নের সিংহভাগ এলাকাতেই ক্রমে নামছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। জেলার সরকারি প্রায় ৩১ হাজার নলকূপের সোয়া ১ হাজার অকেজো হয়ে পড়েছে। সুপেয় পানির নলকূপ থেকে ওঠছে লবণ পানি। অবস্থা আরো প্রকট হচ্ছে। ভোগান্তি বেড়েছে উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে। কষ্টে আছে স্থানীয় বাসিন্দারাও। সারফেস ওয়াটার/বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেই এই সংকট উত্তরণ সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে সুপেয় পানি নিয়ে কক্সবাজারবাসীকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে। কক্সবাজার পৌরসভা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মতে, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। কক্সবাজারে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট হারে নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও শহরের টেকপাড়ায় ১২০ থেকে ১৫০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটের বেশি গভীরে। গত কয়েক বছরে কক্সবাজার সাগরপাড়ের কলাতলী এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমেছে। ফলে অকেজো হয়েছে সাগরপাড়ের তিন শতাধিক আবাসিক হোটেলের অসংখ্য পানির পাম্প। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব ও অন্যান্য মানব সৃষ্ট কারণে পানির যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এই ভোগান্তি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, কক্সবাজার একটি উপকূলীয় জেলা। এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুব বেশি। বিপুল সংখ্য রোহিঙ্গা আগমনসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে ভূ-গর্ভের পানি দিনদিন ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। পানিতে লবণাক্ততা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে। এখনই সুপেয় পানির সংকট কাটানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিকল্প হিসেবে বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগানো যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সূদুর প্রসারী দিক নির্দেশনার আলোকে সারফেস ওয়াটার/বৃষ্টির পানি সংরক্ষণপূর্বক তা ব্যবহারের উপযোগি করার মাধ্যমে উখিয়া, টেকনাফ এমনকি কক্সবাজার পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণের লক্ষে আমরা ইতোমধ্যে ‘কক্স পানি বিদ্যুৎ জীবিকা (ওয়েল)’ নামক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছি। যেটি আয়বর্ধক ও সম্পূর্ণ সবুজ প্রকল্প। স্থাপন হবে উখিয়ার পালংখালীতে প্রায় ৬০০ একর জমিতে। বর্তমানে যেখানে ১০০ একর লীজ নেওয়া আছে। ওয়াকফ স্টেটের এই জমিতে বৃষ্টির পানির জলাধার তৈরীর কাজ চলমান। পরবর্তীতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। ১৫০০ কোটি লিটার ধারণ ক্ষমতার ‘সার্ফেস ওয়াটার রিজার্ভার’ থাকবে ১০টি। যেখান থেকে পরিশোধন করেই নির্দিষ্ট পয়েন্টে পানি সরবরাহ করা হবে। কক্স ওয়েল প্রকল্পের সুফল তুলে ধরে নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। এতে প্রকৃতির উপর কোন প্রভাব পড়বে না। ‘ওয়েল’ প্রকল্পটি অত্যন্ত যুগোপযোগী, অর্থনৈতিক এবং সম্পূর্ণ জনকল্যাণমূখী। প্রকল্পের আয় থেকেই ব্যয় মেটানো হবে। যা “স্মার্ট বাংলাদেশ” গঠনে ভূমিকা রাখবে। বিভিন্ন ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি প্রকল্প, চলমান প্রকল্প এবং বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্পটি রুপরেখা তৈরী করা হয়েছে বলে জানান মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকায় আধুনিক মৎস্য খামার গড়ে তোলা হবে যাতে বর্তমানে উক্ত জমিতে কর্মরত মৎস্যজীবিরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অধিকতর উৎপাদনমূখী রপ্তানীযোগ্য মৎস্য উৎপাদনে সমর্থ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দূরীকরণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও জেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। জলাধারের মধ্যে কনভেনশনাল/ভাসমান সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। টেকনাফ পৌরসভাসহ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন হোটেল মোটেল জোনের পানির চাহিদা পূরণ সম্ভব এই প্রকল্প থেকেই। এছাড়া প্রকল্প স্থান থেকে ১২০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। সার্বিকভাবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি জনকল্যাণমুখি এবং আয়বর্ধক।