অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১ অর্জন করেছেন বিভিন্ন মাধ্যমের ১১ জন সাংবাদিক। সোমবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এক জমকালো অনুষ্ঠানে তাদের হাতে পুরস্কারের অর্থ, সনদপত্র ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
একই অনুষ্ঠানে মফস্বলের সাংবাদিকতায় অবদান রাখা ৬৪ জন প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিককে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ঘিরে সাংবাদিকদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো। এ উপলক্ষে সোমবার বিকেল থেকেই জমে ওঠে আইসিসিবি। মফস্বল থেকে আগত গুণী ও প্রবীণ সাংবাদিকদের ঘিরে অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পুরো অনুষ্ঠানস্থল হয়ে ওঠে প্রবীণ ও নবীন সাংবাদিকদের মিলনমেলায়। এ ছাড়া বিনোদন অঙ্গনের একঝাঁক তারকার উপস্থিতি অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত সংসদ সদস্য, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধারসহ নানা শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা বুবলি।
দেশের গণমাধ্যমে গত বছর প্রকাশিত ও প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিচার বিশ্লেষণ করে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১১ জনকে বাছাই করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে দ্যা ডেইলি স্টারের রিপোর্টার আহমাদ ইশতিয়াক (প্রিন্ট), মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি কাওসার সোহেলী (টেলিভিশন), জাগো নিউজ ২৪.কম-এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম (অনলাইন), অপরাধ ও দুর্নীতি ক্যাটাগরিতে দেশ রূপান্তরের হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শোয়েব চৌধুরী (প্রিন্ট), জিটিভির স্টাফ রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌসী (টেলিভিশন), নিউজ বাংলা২৪.কম-এর ফ্রিল্যান্সার জেসমিন পাপড়ি (অনলাইন), নারী ও শিশু ক্যাটাগরিতে সমকালের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাজীব আহাম্মদ (প্রিন্ট), আনন্দ টিভির রিপোর্টার শওকত সাগর (টেলিভিশন), ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান (অনলাইন), অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রে মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মাজাহারুল ইসলাম (টেলিভিশন) এবং আলোকচিত্রে প্রথম আলোর স্টাফ ফটোসাংবাদিক দীপু মালাকার। তাঁদের প্রত্যেককে পুরস্কারের অর্থমূল হিসেবে আড়াই লাখ টাকা, সম্মাননা স্মারক এবং সনদপত্র দেয়া হয়।
এ ছাড়া বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান উপলক্ষে দেশের তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি জেলা থেকে একজন করে মোট ৬৪ প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিককে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা, সম্মাননা স্মারক এবং সনদপত্র দেওয়া হয়। পরিয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয়। তাদের মধ্যে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো কাভার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকের। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এ ধরনের বিরল সম্মানে ভূষিত হওয়ায় তাদের চোখেমুখে ফুটে ওঠে আনন্দের ঝিলিক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, সমাজের যাবতীয় অনিয়মগুলো দায়িত্বশীলদের নজরে আনার কাজটি করে যান সাংবাদিকরা। তারা সমাজকে সঠিক পথে প্রবাহিত করতে যে ভূমিকা পালন করেন, তা অন্য কারও দ্বারা সম্ভব নয়। সাংবাদিকদের মেধা ও যোগ্যতার কোনো ঘাটতি নেই। এমন অনেক সাংবাদিক আছেন, যারা বিসিএস পরীক্ষা দিলে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে বড় পদে আসীন হতে পারতেন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করায় বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ সকল সাংবাদিকদের মধ্যে উৎসাহ জোগাবে। একইসঙ্গে গুণী সাংবাদিকদের সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে তারা খুবই মহৎ কাজ করেছে। এ জন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানাই। পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানান তিনি।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান সরকারের শাসনামলেও বেসরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়। এটি গঠনের উদ্দেশ্যই সাংবাদিকদের সহায়তা দেয়া। এটি আজকে সাংবাদিকদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার এমন সাংবাদিকরাও সহায়তা পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও পাবেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোয় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি কোন আইনের মাধ্যমে বিচার প্রত্যাশা করবেন? তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ আইন করা হয়। এই আইনের ফলে অনেকেই বিচার ও নিরাপত্তা পেয়েছেন। তবে এই আইনের কারণে কোনো সাংবাদিক বা নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে সর্বোচ্চ দৃষ্টি রাখতে প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতির দেশ হলেও করোনা পরিস্থিতিতে একজন মানুষকেও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়নি। সরকারের আন্তরিকতায় দ্রুত করোনা টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের সাফল্যগুলো অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান তার বক্তব্যে বলেন, সারা দেশ থেকে প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিকদের সম্মানিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করার এই পদক্ষেপ দেশের নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। আগামী বছর থেকে পুরস্কারের পরিধি আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কালের কণ্ঠ পত্রিকার মধ্য দিয়ে আমরা মিডিয়া জগতে পা রাখি। তারপর একে একে সাতটি মিডিয়া হাউজ খুলেছি। বাংলাদেশ প্রতিদিন বাংলাদেশের এক নম্বর পত্রিকা। সবার হাতে হাতে পত্রিকাটি দেখা যায়।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছি। যিনি না হলে আজকে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধুর কারণে আজকে দেশে সাংবাদিকতায় সমৃদ্ধি পেয়েছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সত্যকে সত্য বলবেন, মিথ্যাকে মিথ্যা। আমাদের পত্রিকা প্রকাশনার উদ্দেশ্যই ছিল সত্য তুলে ধরা।
দেশের অগ্রযাত্রায় ব্যবসায়ীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমালোচনা করার আগে অবশ্যই তাদের অবদান স্বীকার করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো অন্যায় জুলুমের শিকার না হন, সেদিকে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আমরা সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমাদের নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।