চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট পিলার ৩৭৯টি। এর মধ্যে বন্দর থেকে কাঠগড় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ছাড়া সব পিলার নির্মাণের কাজ শেষ। প্রকল্পের সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রস্থের প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুন মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা।
এর মাধ্যমে স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে এগোচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সংযুক্ত হবে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে। চট্টগ্রামে বাড়বে বিনিয়োগ, বাড়বে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। বিকশিত হবে পর্যটন খাত। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে যোগাযোগব্যবস্থায়। যানজট মুক্ত হবে বিমানযাত্রীদের যাতায়াত পথ। সঙ্গে ভোগান্তি নিরসন হবে কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মূল সড়কে যাতায়াতকারীদের। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
চউকের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ এখন ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ৩৭৯টি পিলারের মধ্যে অধিকাংশ পিলারের কাজ শেষ। চলমান গতিতে কাজ চললে ২০২৩ সালের জুন মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, এটি চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের প্রকল্প। এই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। চট্টগ্রামে তৈরি হবে বিনিয়োগ পরিবেশ। বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প। যানজটমুক্ত হবে সড়ক।
এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, এ প্রকল্পে নকশা পরিবর্তন, জায়গা জটিলতাসহ নানা সমস্যা ছিল। এখন সব সমস্যা কেটে গেছে। ফলে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। তবে পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন এবং বন্দরের কাছ থেকে জমি ক্রয় বাবদ কিছু ব্যয় বাড়তে পারে।
চউক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন।
সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এই এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট, দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড়, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড়, কাঠগড় থেকে ভিআইপি রোড এবং সি বিচ থেকে ভিআইপি রোড পর্যন্ত ভাগ করে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাঠগড় থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত পিলার ও এক্সপ্রেসওয়ের ঢালাইয়ের কাজ শেষ। কাঠগড় থেকে আগ্রাবাদ-দেওয়ান হাট পর্যন্ত পিলার নির্মাণকাজ শেষ। এখন চলছে আগ্রাবাদ থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত পিলার নির্মাণের কাজ। পুরো এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় গাড়ি ওঠা-নামার জন্য ২৪টি র্যাম্প আছে। এর মধ্যে টাইগারপাস এলাকায় চারটি, আগ্রাবাদে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলী মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেডে চারটি, কেইপিজেডে দুটি, কাঠগড়ে দুটি, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় থাকবে দুটি র্যাম্প। প্রতিটি র্যাম্প হবে দুই লেনের এবং একমুখী।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন প্রকল্প এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন, নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ, টোল প্লাজা নির্মাণ, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন পয়েন্টে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, সাউন্ডপ্রুফ ব্যারিয়ার স্থাপন ও বৈদ্যুতিকপুল স্থানান্তরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারণার চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্পের শুরুতে বিষয়গুলো না রাখায় নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে নতুন করে কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় খরচও বাড়ছে। এ কারণে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুৎ ও ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে নতুন করে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তা এখনো অনুমোদন হয়নি।
প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পে কিছু বিষয় নতুন করে যোগ হয়েছে। তাই এ কাজ সম্পন্ন করতে মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তা এখনো অনুমোদন পাইনি।’