আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্বপ্নের সেতুতে তারাও খুশি, তবে মুখটা মলিন

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৯ জুন ২০২২ ১২:৫৬:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

আর স্বপ্ন দেখা নয়, এবার কাছে গিয়ে সেতু ছুঁয়ে দেখবে মানুষ। আগামী ২৫ জুন সেই স্বপ্ন ছোয়াঁর আকাঙ্ক্ষিত দিন। এ নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। এর মধ্যেও কিছু মুখে হাসি নেই পদ্মার পাড়ে। কর্মসংস্থান হারানো আর রুটি-রুজির চিন্তায় পড়েছেন তারা।

এতদিন পদ্মা পারাপারে নিয়োজিত থাকা লঞ্চ ও ট্রলারের মালিক-শ্রমিকরা পড়েছেন এই দুশ্চিন্তায়। তাদের অনেকের মনে প্রশ্ন- সেতু চালু হলে নদীতে স্পিডবোট, লঞ্চ কিংবা ফেরির মতো নৌ-যান চলবে কি? বিদ্যমান ঘাটগুলো থাকবে তো?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা নদীতে বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন চলাচল করছে ৮৭টি লঞ্চ, দেড় শতাধিক স্পিডবোট, ১০টি ফেরি।

সেতু চালু হওয়ার পর ঘাটে মানুষের আনাগোনা কমে আসবে। বিভিন্ন সূত্রে শ্রমিকদের কানে খবর যাচ্ছে সেতু চালু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় নদী পারাপারের কাজে জড়িত এসব শ্রমিকদের রুটি-রুজির সংস্থানের দুশ্চিন্তা তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

এই ঘাটটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। ঘাট যদি পর্যায়ক্রমে বন্ধও করে দেওয়া হয়, আমাদের অনুরোধ অন্তত এই জায়টিতে একটা পর্যটন কেন্দ্র করে দেওয়া হোক। তাহলে আমরা সুন্দরভাবে খেয়েপরে বাঁচতে পারব। এই এলাকায় মানুষ আসলেই আমাদের কাজকর্ম সব ঠিক থাকবে।

ফেরি ঘাটে কথা হয় শ্রমিক রমজান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন যে পরিমাণ লোক ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে, সেতু চালু হলে চার ভাগের তিনভাগ কমে যাবে। আবার বিভিন্ন দিক থেকে শোনা যাচ্ছে ধীরে ধীরে ঘাট নাকি বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে আমাদের কী হবে? ঘাটে লোকজন না আসলে তো আমাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে।

রমজান আলী বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে, এতে আমরা অনেক খুশি। তবে ঘাট যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমরা খাব কী? এরকম যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে যেন আমাদের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তাছাড়া আমাদের আর কোনো আয়ের ব্যবস্থা নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক অসহায়। ঘাট থাকলেও যে টাকা বেতন পাই, চলতে আমাদের কষ্ট হয়। আর যদি ঘাটই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো আমাদের কোনো কর্মই থাকবে না।

লঞ্চ ঘাট সুপারভাইজার মো. আবু জাফর বলেন, ব্রিজ চালু হওয়ার পর যদি ঘাট বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আর যদি এই জায়গাটিকে একটি টুরিস্ট স্পট হিসেবে চালু রাখা হয়, বিভিন্ন জায়গা থেকে টুরিস্টরা যদি পদ্মা সেতু দেখতে এখানে ঘুরতে আসে, তাহলে আমাদের কিছু রুটিরুজির ব্যবস্থা হবে।

সেতু চালু হওয়ার পর ঘাটে মানুষের আনাগোনা কমে আসবে। বিভিন্ন সূত্রে শ্রমিকদের কানে খবর যাচ্ছে সেতু চালু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় নদী পারাপারের কাজে জড়িত এসব শ্রমিকদের রুটি-রুজির সংস্থানের দুশ্চিন্তা তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, এই ঘাটে অন্তত একশর মতো ট্রলার আছে। এর সঙ্গে জড়িত কম হলেও চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ। এর বাইরেও পর্যটনকে কেন্দ্র করে অনেক দোকানপাটও আছে। সবমিলিয়ে অসংখ্য মানুষ আর তাদের পরিবার এই ঘাটের সাথে সরাসরি জড়িত। যদি এই ঘাটটি না থাকে, তাহলে দিন আনে দিন খায় এমন অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যখন তারা বেকার হয়ে যাবে, তখন এলাকায় চুরি-ছিনতাই বেড়ে যাবে। ঘাট না থাকলে এই জায়গাটি মাদকের আখড়ায় পরিণত হবে।