আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সীমান্তে মানবপাচার, উধাও ১০০ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর ২০২২ ০৪:০৭:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী ও উপকূলীয় জনপদ টেকনাফ উপজেলায় নীরবে আবার শুরু হয়েছে মানবপাচার। একমাসের মধ্যে শুধুমাত্র উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম থেকে প্রায় ১০০ মানুষ সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছেন।

 

 

 

 

 

একমাস অনুসন্ধান করে সরেজমিন থেকে আরটিভি নিউজ এই তথ্য পেয়েছেন। তিন পর্বের অনুসন্ধানের আজকে প্রথম পর্ব।

 

 

 

 

সচেতন মহল মনে করছে তিনটি গ্রাম থেকে প্রায় ১০০ ব্যক্তি এলাকা ছাড়লেও পুরো উপজেলায় সে সংখ্যা দাঁড়াবে হাজারেরও বেশি। তবে অনেকের স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মিয়ানমারের কারাগারে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

 

 

 

নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ও মিয়ানমারের কারাগারে বন্দিজীবন অতিবাহিত করা মানুষগুলোর স্বজন ও পরিবার-পরিজনদের মাঝে এখন মাতম চলছে। যারা বসতবাড়ি ছেড়ে ছিলেন, তাদের কেউ কেউ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন। যারা মিয়ানমারের কারাগারে বন্দিজীবন পার করছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তাদের পরিবার।

 

 

 

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লাতুরীখোলা, দৈংগ্যাকাটা ও কানজরপাড়া গ্রাম ঘুরে পাওয়া গেছে মানবপাচারের অসংখ্য বাস্তব কাহিনি। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের হোয়াইক্যং বাজার থেকে পশ্চিমে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত পাহাড়বেষ্টিত তিনটি গ্রাম থেকে গত মাসের শুরু থেকে ১০০ ব্যক্তি মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে যুবক ও কিশোরের সংখ্যাই বেশি।

 

 

 

এ ছাড়া তাদের অনেকেই অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমারে প্রবেশ করে। পরে সেখান তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইয়াংগুনের চামিলা এলাকায় দালালদের বন্দিশালায়। এই তথ্যটি তাদের মধ্যে একজন রিদুয়ান তার বাবা-মাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে জানিয়েছেন।

 

 

 

অন্যদিকে কানজরপাড়া এলাকার চারজনের একটি কিশোর দল দালালের খপ্পরে পড়েন। পরে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে তাদের মিয়ানমারের চামিলায় বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়েছে। এই তথ্য সেখান থেকে আকতার নামের এক কিশোর ভিডিও কলে তার বাবাকে জানিয়েছেন। এ সময় তার কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছে তার স্বজনরা। সেখানে আকতারকে বলতে শোনা যায়, শামীমসহ কয়েকজন দালাল বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তাদের মিয়ানমারে চামিলা নিয়ে আটকে রাখে। তাদের দেশে ফেরত আসতে বা মালয়েশিয়া নিয়ে যেতে দেড় লাখ টাকা করে দাবি করছেন দালালরা। টাকা পরিশোধ না করলে, তাদের কিছুতেই ফেরত দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে দালালরা।

 

 

 

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল হাসেম বলেন, রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে গিয়ে বিভিন্ন নির্যাতন শিকার হচ্ছে এলাকার অসংখ্য যুবক-কিশোর। শুধুমাত্র এই এলাকা থেকে ৭০ জনের বেশি লোক মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে গিয়ে এলাকা ছেড়েছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনোরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

 

 

 

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, বেশ কিছু লোক অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে গিয়ে মিয়ানমার পুলিশের কাছে আটক হয়েছেন। তবে কিছু ব্যক্তি মালয়েশিয়া পৌঁছাতে পারলেও বেশ কিছু লোকের হদিস মিলছে না। এটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগ ও শঙ্কার বিষয়।

 

 

 

তিনি আরও জানান, যদি বিষয়টি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে আবারও কোথাও গণ-কবরের সন্ধান মিলতে পারে। রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে মানবপাচারের দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। অনেক মালয়েশিয়াগামীকে আটক রেখে মুক্তিপণ দাবি করছে। অনেকে ফিরে আসলেও তাদের শিকার হতে হয়েছে নির্যাতনের।

 

 

 

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হালিম বলেন, টেকনাফ থানায় সদ্য যোগদান করে ঝিমংখালী এলাকা থেকে আজিজুল হক (১৭) নামের এক কিশোর ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও পাঁচ দালালকে আটক করা হয়। কোনো মানবপাচারকারী রেহাই পাবে না, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

টেকনাফস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি ব্যাটালিয়ন-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে কোনো বাংলাদেশি মিয়ানমার কারাগারে রয়েছে এমন তথ্য তার কাছে নেই। তবে অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাচাররোধে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।