চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ইকোপার্ক মহাদেবপুর সরকারি জায়গার উপর থাকা গ্রামের পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ করে ও ফসলি জমি ভরাট করে ফ্ল্যাট-প্লটের রাস্তা নির্মাণ করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ইতিমধ্যে রাতের অন্ধকারে ট্রাকে ট্রাকে বালু ও ইটের কণা ফেলে ৫০ ফুটের পানি চলাচলের পথটি সম্পূর্ণ ভরাট করে ফেলেছে চক্রটি। একইসাথে স্থানীয় এক প্রবাসীর সাড়ে উনিশ শতক কৃষি জমিও ভরাট করে ফেলেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে ওই চক্রটির বিরুদ্ধে। পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়ায় আশেপাশের কৃষক, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। তাদের অভিযোগ, মহাসড়কের পূর্ব পাশের ছড়া আকৃতির লম্বালম্বি প্রশস্ত জায়গাটি আশেপাশের কয়েক গ্রামের পানি চলাচলের একমাত্র পথ। সম্প্রতি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী একটি চক্র প্লট নির্মাণের জন্য পানি চলাচলের পথটির পূর্ব পাশের কিছু কৃষি জমি কেনাবেচা করে। আর ক্রেতাকে রাস্তা বুঝিয়ে দিতে তারা সরকারি জায়গায় থাকা পানি চলাচলের পথ দখল করে রাতারাতি ভরাট করে ফেলছে। এতে বর্ষাকালে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইসাথে কৃষি জমির সেচ ব্যবস্থাও হুমকিতে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। সোমবার (১৫ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীতাকুণ্ড পৌরসভার মহাদেবপুর ইকোপার্ক এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত সাব প্লাস সিএনজি স্টেশনের সামনের অংশ ঘেঁষে একটি প্রশস্ত খাল সোজা দক্ষিণে চলে গেছে। যা দেড় কিলোমিটার দূরের একটি শাখা খালে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এ খালটি দিয়ে পৌরসভার মহাদেবপুর, ফকিরহাট, ঢালিপাড়া, সিরাজ ভূঁইয়া রাস্তার মাথা, রহমত নগর, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কসহ দুটি হিন্দুপাড়ার পানি চলাচল করে। পানি চলাচলের জায়গাটি সড়ক ও জনপদের সরকারি সম্পত্তি। কিন্তুু গত কয়েকদিন আগে সেখানে উঁচুভাবে বালু ও ইটের কণা ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরো পানির পথটি রুদ্ধ হয়ে গেছে। একইসাথে আশেপাশের কৃষি জমিও ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। এদিকে অভিযোগ ওঠেছে মোঃ শাহাজাহান নামে এক প্রবাসীর ১৯.৫০ শতাংশ কৃষি জমি জোরপূর্বক ভরাট করেই রাস্তটি করে ফেলছে চক্রটি। জায়গাটি ছেড়ে দিতে তারা রীতিমতো প্রবাসীর স্ত্রীকে বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে প্রবাসীর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম চট্টগ্রামের (উত্তর) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ জনকে বিবাদী করে একটি মিছ মামলা দায়ের করেছেন। এরা হলেন, সীতাকুণ্ডের পূর্ব মুরাদপুর ঢালিপাড়া এলাকার মৃত মকবুল মিস্ত্রীর ছেলে হোসেন নিজামী (৬৫), হোসনের নিজামীর ছেলে আলাউদ্দিন, গিয়াসউদ্দিন, সোহাগ উদ্দিন ও একই এলাকার বাসিন্দা মোঃ জাহিদ। হোসেনে আরা বেগমের অভিযোগ গত ৯ মে রাতে ১টায় বিবাদীরা তার স্বামীর ক্রয়কৃত জমিতে ট্রাকে ট্রাকে মাটি ফেলতে থাকেন। এতে তাদের জমিটি ভরাট হয়ে যায়। এর আগে ওই চক্রের সদস্য জাহিদ তাকে জায়গাটি ছেড়ে দিতে বলেন। একইসাথে তার স্বামীকে ফোন করে এমনভাবে বুঝাতে বলেন যেন তিনি জায়গা নিয়ে মাথা না ঘামান৷ অন্যথায় তাদেরকে ঘুমে রেখে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও হুমকি দেন জাহিদ। হোসনে আরা বেগম আরও বলেন, ১৯.৫০ শতাংশের কৃষি জমিটি ১৯৯৮ সালের রেজিস্ট্রি দলিলমূলে মহাদেবপুর মৌজার আরএস ১৯০৩ নম্বর খতিয়ানের আরএস ৫৬৮২ দাগের ও তৎসামিল বিএস ২৯৭ খতিয়ানের বিএস ৬১৮৬ দাগের সম্পত্তি হয়। পরবর্তীতে খরিদসূত্রে নামজারি খতিয়ান ২০৬০ ও ৬২৩৪ মূলে তার স্বামী মোঃ শাহাজাহানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। কিন্তুু তার স্বামী দীর্ঘ দিন প্রবাসের থাকার সুযোগে ভূমিদস্যু চক্রটি জমিটি দখলের পাঁয়তারা করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে তারা জোরপূর্বক ভরাট করে ফেলছে। অন্যদিকে এলাকার পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। কৃষক মোঃ মুছা (৬০) বলেন, মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া পানি চলাচলের পথটি কয়েক গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথ। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলের পানি ইকোপার্ক ছড়া দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই পথে নামে। এরপর শাখা খাল হয়ে সরাসরি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে। এতে বন্যা থেকে রেহাই পান গ্রামবাসী। তাছাড়া শুস্ক মৌসুমে সরু এ খালটি হয়ে ওঠে আশেপাশের কৃষি জমির সেচের একমাত্র ভরসা। তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে অবগত হয়েও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তারা সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, চক্রটি নিজেদের প্লটের রাস্তা বানাতে গ্রামবাসীকে ডুবিয়ে মারার পরিকল্পনা করছে। আমরা ইউএনও ও এসিল্যাণ্ডকে অভিযোগ দিয়েছি। অবিলম্বে আমাদের পানি চলাচলের পথ খুলে দিতে হবে। সরকারি জায়গায় থাকা পানি চলাচলের পথ দখল হতে দিব না আমরা। জানতে চাইলে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূৃমি) মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, মধ্য রাতে পানি চলাচলের পথ ভরাট করার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ তিনি ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। উভয়পক্ষকে ডেকে পাঠিয়েছেন। পানি চলাচলের পথ বন্ধের কোন সুযোগ নেই। দ্রুত মাটিগুলো অপসারণ করে পানি চলাচলের পথটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।