বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে সিলেট। মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও উপদ্রুত এলাকার মানুষকে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন রয়েছেন। মুখ থুবড়ে পড়েছে যোগাযোগ ও অবকাঠামো।
ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ধস নেমেছে। বন্যার পানি যতই নামছে, ততই ভাসছে সড়কের ক্ষত। শহর থেকে গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাট পানির তোড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সড়ক। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখনো অনেক সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে।
পানি কমে যাওয়া সড়কগুলো মেরামতে সংশ্লিষ্টদের চ্যালেঞ্জর মুখে পড়তে হবে মনে করছেন স্থানীয়রাও। সড়কে প্রায় ৪৫০ কোটিরও বেশি বরাদ্দ দিতে হবে সরকারকে। ঘর-বাড়ি, অবকাঠামো, সড়ক, মৎস, কৃষিসহ সবখাত মিলিয়ে সিলেটে বন্যায় প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ধারণা জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের। তবে অর্থ বরাদ্দ না এলে ক্ষতিগ্রস্ত সেসব সড়কে ভোগান্তির শিকার হবেন মানুষজন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীসহ সিলেট সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১২০টি সড়কে ২৩০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন ৮টি সড়কে ৫৫ কিলোমিটার, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার সড়ক বন্যা প্লাবিত হয়েছে। অনেক সড়ক এখনো প্লাবিত রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবীর বলেন, সিলেট জেলায় এলজিইডির ৭ হাজার ৫১০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। পাকা সড়ক ২ হাজার ৪৯১ কিলোমিটার এবং কাঁচামাটির সড়ক ৫ হাজার ১৯ কিলোমিটার। এরমধ্যে বন্যা কবলিত হয়ে ১৩ উপজেলায় ১২০টি সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭৮ কিলোমিটার। এসব সড়কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করেছেন প্রায় ২৪৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
আর সড়ক ও জনপথ সিলেটের অধীনে ১০টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত ৭২ কিলোমিটার আপাতত চলাচলের উপযোগী করে দিতে প্রয়োজন ৫ কোটি টাকা। আর বন্যায় সড়কগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে ৫০ কিলোমিটার। এসব সড়ক পুরোপুরি সংস্কারের জন্য শতকোটি টাকার প্রয়োজন, বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন ১০টি সড়কে ৭২ কিলোমিটার বন্যা প্লাবিত হয়ে ক্ষতি হয়েছে। এই সড়ক দুই ধাপে মেরামত করা হবে। আপাতত চলাচলের উপযোগী করে দিতে অন্তত ৫ কোটি টাকা খরচ হবে। আর পুরোপুরি সংস্কারে হাত দিলে প্রায় শতকোটি টাকা লাগতে পারে!
এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিসিক এলাকার ৫০০ কিলোমিটার সড়কের অর্ধেকই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডের প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার সড়ক বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শতকোটির ওপরে হবে। তবে এখনো সড়কের ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি হিসাব করা হয়নি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, সারি-গোয়াইনঘাট ২য় থেকে ১৬ তম কিলোমিটার পর্যন্ত ১২ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার, সিলেট-তামাবিল-জাফলং সড়ক ১ দশমিক ২০ কিলোমিটার, কানাইঘাটের দরবস্ত-কানাইঘাট-শাহবাগ সড়ক ৭ থেকে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ৩য় থেকে ৫ম এবং ৮ থেকে ১৩তম কিলোমিটার পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, বিশ্বনাথ উপজেলার রশিদপুর-লামাকাজি সড়ক ১৫ থেকে ১৭ তম কিলোমিটার পর্যন্ত ২ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জ-ছাতক সড়ক ১ থেকে ১২ তম কিলোমিটার পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৫ পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, শেওলা সুতারকান্দি সড়কে ১ থেকে ৪র্থ কিলোমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও (টুকেরবাজার) সড়কে ৫ থেকে ৯, ১১ ও ১২ তম কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।