আজ শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিআরবির হাসপাতালটি ‘বঙ্গমাতা’ নামকরণের প্রস্তাব অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:০৯:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

পূর্ব রেলের সদর দপ্তর চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) একটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের প্রকল্পটি ‘বঙ্গমাতা’র নামে করার অনুমতি দিয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।

বেসরকারি ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের করা আবেদনে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা ‍মুজিব স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স’ নামকরণের অনুমতি পায়।

 

গত ২৭ অক্টোবর ট্রাস্টের সভায় অনুমোদন পেলেও সোমবার বিষয়টি জেনে সিআরবিতে কোনো স্থাপনা গড়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা বলছে, ‘বেনিয়া গোষ্ঠীর স্বার্থে’ বঙ্গমাতার নাম ব্যবহার অযৌক্তিক। চট্টগ্রামে বঙ্গমাতার নামে সরকারি হাসপাতাল হতে পারে।

 

সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে প্রায় ছয় মাস ধরে আন্দোলন করছে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম ও সিআরবি রক্ষা মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

 

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সিআরবিতে ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অটুট রাখতে সেখানে হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছে আন্দোলনকারীরা।

 

ট্রাস্টের অনুমোদনের নথিতে দেখা যায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ অক্টোবরের সভায় বঙ্গমাতার নামে নামকরণের প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ৫ ডিসেম্বর ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি রেল সচিবকে জানানো হয়।

 

প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ব্রিজ) মো. আহসান জাবির সোমবার বলেন, “নামকরণের প্রস্তাব ইউনাইটেড করেছিল। তাদের প্রস্তাবটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ট্রাস্টকে জানানো হয়। ট্রাস্ট সেটি অনুমোদন করেছে।” 

 

ট্রাস্ট্রের দেওয়া অনুমোদনের নথি পেয়েছেন বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক মো. আহসান জাবির।

 

তবে সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরে পরিবেশগত প্রভাব প্রতিবেদন (এনভায়রনমেন্ট ইমপেক্ট অ্যাসেসমেন্ট) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন।

 

সেসব অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আহসান জাবির বলেন, “সেগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে। পরিবেশের অনুমতি গুরুত্বপূর্ণ। সেটি পেলে সিডিএ তে আবেদন করবে।”  

 

এদিকে সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসা নাগরিক সমাজ সোমবার বিকালেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।

 

নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, “চট্টগ্রামে বঙ্গমাতার নামে হাসপাতাল হোক, এটা আমরাও চাই। বঙ্গবন্ধুর সাথে সারাজীবন শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছেন বঙ্গমাতা। তাই উনার নামে সরকারি হাসপাতাল করা হোক বা বিদ্যমান কোনো সরকারি হাসপাতালের নামকরণ করা হোক যাতে সাধারণ মানুষ সেখানে সেবা পেতে পারে।

“পিপিপিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যে বিলাসবহুল হাসপাতাল করবে তাতে কার স্বার্থ রক্ষা হবে? চট্টগ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সিআরবির ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক অবস্থা বিনষ্ট করে হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার দাবি জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নামে নামকরণ করে এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।”   

 

বাবুল বলেন, “২০০৯ সালের গেজেট অনুসারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত ও সরকার ঘোষিত হেরিটেজ জোন সিআরবি। তাই এখানে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ সংবিধান ও আইন পরিপন্থি।

 

“চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। আমরা আন্দোলনের পাশাপাশি প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।”

 

বিকালের প্রতিবাদ সমাবেশে নাগরিক সমাজের কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ বলেন, “এখানে শহীদদের কবর রয়েছে। কোনোভাবে সেই কবর ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ধ্বংস হতে দিতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নাম ব্যবহার করে কোনো বেনিয়া গোষ্ঠীকে মানুষের রক্ত শোষণের সুযোগ দিতে পারি না।”

 

প্রস্তাবিত প্রকল্প স্থানের সামনে গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলন করছে বিভিন্ন সংগঠন। এর উল্টো দিকে সিআরবি ভবনের সীমানা প্রাচীরে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল ও হাসপাতাল’ গোয়ালপাড়া এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন চাই’- লেখা একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে কয়েকদিন আগে।

সিআরবিতে হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনের শুরুর দিকেও ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন বাস্তবায়ন সংগ্রাম ঐক্য পরিষদ’ এর নামে একই রকম একটি ব্যানার লাগানো হয়েছিল। তবে এই সংগঠনকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি কখনও।

 

অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ের সদর দপ্তর সিআরবি ভবনটি হয় ১৮৯৫ সালে। শতবর্ষী বৃক্ষঘেরা পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এ এলাকাটি জনসমাগমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। আশেপাশের পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণির আবাস।

 

বর্তমান সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ের অদূরে রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি রোড এবং এই রাস্তাটির দুপাশে থাকা প্রায় ৫০টি কর্মচারী কোয়ার্টার (একতলা সেমিপাকা) নিয়ে মোট ছয় একর জমিতে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় সিসিইএ সভায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

 

এরপর গত বছরের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারপর চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত জমির সামনে প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়।

 

এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ও সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি)। কার্যনির্বাহী সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে ইউনাইটেড চট্টগ্রাম হাসপাতাল লিমিটেড।

 

প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ১০০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং দুই ধাপে মোট ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। ৫০ বছর পর প্রকল্পের মালিকানা হবে রেলওয়ের।



সবচেয়ে জনপ্রিয়