আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাতকানিয়ায় ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষনকারী অস্ত্রধারীরা অধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতকানিয়া : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৩১ অগাস্ট ২০২৪ ০৫:৫৭:০০ অপরাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম

সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ঘর—বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের আগের দিন উপজেলার কেরানীহাটে ছাত্র—জনতার দিকে গুলি ছোড়ার ঘটনায় অস্ত্রধারীরা  এখনো অধরা। জনরোষ এড়াতে শুধু নেতারা—ই নন, কর্মীরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা হেলমেট পরা অস্ত্রধারীরা রয়েছে অধরা। উদ্ধার হয়নি সেসব অবৈধ অস্ত্রও।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত ৪ আগস্ট উপজেলার কেরানীহাটে ছাত্র—জনতার দিকে নির্বিচারে গুলি ছোড়েন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেদিনের গুলিবর্ষণের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। সরকার পতনের পর অনেককে মোবাইল ফোনে কল করেও পাওয়া যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ৪ আগস্টের ঘটনায় বন্দুক হাতে সামনে থাকা হেলমেটধারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী। গ্রেফতারের ভয়ে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকেই আবার দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে স্থানীয় সূত্র বলছে, সে দিনের অস্ত্রধারীদের অনুসারী কেউ কেউ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘটনার দিন অস্ত্র বহন এবং গুলি বর্ষণের ঘটনায় কেউ মুখ খুললে তাদের দেখে নেয়ার হুমকি—ধমকি দিচ্ছেন। স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে তাদের অনুসারীরা সেদিন গুলিবর্ষণ করেছে। কিন্তু ঘটনার চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই অস্ত্রধারী কেউ গ্রেফতার হননি।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবিতে দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ৪ আগস্ট দুপুর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম—কক্সবাজার মহাসড়ক দখল করে নেয় আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন কৃষক—শ্রমিক, জনতাসহ সকল শ্রেণি—পেশার হাজার হাজার মানুষ। ওইদিন বেলা ৩টায় ছাত্র—জনতার বিক্ষোভ মিছিল শুরু হলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের সাতকানিয়া উপজেলার মিঠাদিঘী থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এছাড়া খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে। মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা কেরানীহাট স্টেশনের দিকে আসতে থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একপর্যায়ে কেরানীহাট স্টেশনে পৌঁছালে বিক্ষোভকারী ছাত্র—জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। তবে সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্র—জনতা তাদের ধাওয়া দিলে পিছু হটে তারা। এরপর তাদের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

জানা যায়, ওইদিন সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জড়ো হন কেরানীহাটে। ছাত্র—জনতাকে দমনে সেখানে দফায় দফায় বৈঠক করেন তারা। সিদ্ধান্ত নেন ছাত্র—জনতাকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করার। যার তদারকির দায়িত্বে ছিলেন কয়েকজন আওয়ামীপন্থি জনপ্রতিনিধি। তাদের প্রত্যক্ষ মদদেই সেখানে ছাত্র—জনতার উপর গুলিবর্ষণ করে অস্ত্রধারীরা।

জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকে অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ছাড়া অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। আমরা শিগগিরই অস্ত্র উদ্ধারের জন্য একটি যৌথ অভিযান চালাব।