আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকারি দামের ধারেকাছেও নেই চামড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৮ জুন ২০২৪ ০১:৩২:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

চট্টগ্রামে এবারও কম দামে বিক্রি হয়েছে কোরবানি পশুর চামড়া। আকারভেদে প্রতি পিস ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। তবে বিক্রি হয়নি ছাগলের চামড়া। এদিকে, গত বছরের তুলনায় এবার চামড়া প্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা ১০০ টাকা। 

 

দাম কম হওয়ায় এবারও চামড়া বিক্রি নিয়ে আগ্রহ কম কোরবানিদাতাদের। তাই অনেকে বিক্রি না করে এতিমখানায় দান করে দিয়েছেন। এদিকে ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ কোরবানিদাতা ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা।

 

জানা গেছে, দাম বেশি পাওয়ার আশায় কোনও কোনও মৌসুমি ব্যবসায়ী কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। তবে আড়তদাররা কিনেছেন ২৫০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকার মধ্যে।

 

এদিকে, এবার ঢাকার মধ্যে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম সরকার নির্ধারণ করেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর সবচেয়ে ছোট চামড়াটিও কমপক্ষে ২৫ বর্গফুট হয়। আর বড় চামড়াগুলো হয় ৬০ বর্গফুট পর্যন্ত। অথচ চট্টগ্রামে লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া কেনা হয়েছে ১০ থেকে ২৫ টাকা করে। তবে এখানে বর্গফুট হিসাবে নয়, গড়ে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা।

 

রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী শেখপাড়া গ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মো. রফিক বলেন, ‘এবারও চামড়ার দাম বাড়েনি। আমি ১২০টি চামড়া কোরবানিদাতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি। শহরের আতুরার ডিপোর আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা প্রতি পিস ২৭৫ টাকা করে দাম দেওয়ার কথা বলেছে। এ কারণে আমি এখানকার এক পাইকারের কাছে চামড়াগুলো ২৫০ টাকা করে বিক্রি করে দিয়েছি।’

 

জয়নাল আবেদীন নামে রাউজান উপজেলার অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি ছাগল দিয়ে কোরবানি দিয়েছি। ১৪ হাজার টাকায় কেনা ছাগলের চামড়াটি নেওয়ার জন্য কেউ আসেনি। এ কারণে আবর্জনার স্তূপে ফেলে দিয়েছি।’

 

রাউজান কদলপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আলী আকবর বলেন, ‘আমাদের পরিবারে দুটি গরু দিয়ে কোরবানি দিয়েছি। চামড়া গাউসিয়া কমিটিকে দান করে দিয়েছি। এলাকায় তেমন কাউকে চামড়া বিক্রি করতে দেখিনি। এলাকায় কিনতেও তেমন কেউ আসেনি। চামড়ার টাকা কোরবানিদাতারা ভোগ করে না, এতিম-গরিবদের দিয়ে দেন। দাম কম হওয়ায় লোকজন এতিমখানায় চামড়াগুলো দান করে দিয়েছে।’

 

নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী এম এ মুবিন বলেন, ‘নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় আড়তদাররা ৪৫০ টাকার বেশি দামে চামড়া কিনেছেন না। কোরবানিদাতারা এবারও ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করে চামড়া বিক্রি করেছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার চামড়া প্রতি ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।’

 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি  মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘এবার ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আমরা চামড়া কিনছি। চামড়া এখনও আড়তে আসছে। সোমবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৭০ হাজার থেকে এক লাখ চামড়া আড়তদারদের কাছে এসেছে। অনেকে স্থানীয়ভাবে লবণজাত করে সংরক্ষণ করে থাকে। এসব চামড়া কিছুদিন পর আড়তে কিংবা ট্যানারিতে যাবে।’

 

গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও মানবিক সেবা টিমের প্রধান সমন্বয়ক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, ‘এবার গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় মিলে এক লাখ পিসের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহের টার্গেট নিয়েছে। এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ হয়েছে তা গণনা হয়নি। চামড়া সংগ্রহের জন্য গাউসিয়া কমিটির প্রায় চার হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছেন।’

 

তিনি বলেন, ‘এবার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিলা মাদ্রাসা মাঠে চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। বিবিরহাট বাজারে এবং আতুরার ডিপোর একটি গুদামে চামড়াগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসার মাঠে এবং নগরীর হালিশর এলাকায় অবস্থিত মাদ্রাসার মাঠে সংরক্ষণ হচ্ছে চামড়া। সবমিলিয়ে এবারও এক লাখ চামড়া জমা হবে গাউসিয়া কমিটির ফান্ডে।’

 

চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত একমাত্র ট্যানারি রিফ লেদারের পরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমরা এবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছি না। শুধুমাত্র লবণজাত চামড়া আড়তদারদের কাছ থেকে কেনা হবে। এবারও এক লাখের মতো চামড়া কিনবো। কয়েকদিন পর থেকে আমরা চামড়া কেনা শুরু করবো।’

 

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে আট লাখ ৮৫ হাজারের মতো পশু কোরবানি হয়েছে।



সবচেয়ে জনপ্রিয়