বৈশ্বিক মহামারী কোভিট-১৯ এর কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রবাস ফেরত বেকারদের জন্য আশির্বাদ হয়েছে। দেশে ফিরে যখন কোন কাজই করতে পারছেন না তখন তারা ঝুঁকেছেন কৃষিতে। প্রচলিত ও ঐতিহ্যগত শস্যের পাশাপাশি নতুন নতুন শস্য চাষে আগ্রহী হয়েছেন তারা। এছাড়া এসময় দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও কৃষির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।যার ফলে নিরবে দেশে কৃষি বিপ্লব ঘটছে বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে, বৈশ্বিক নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিয়ে দেশে কৃষির ওপর গুরুত্ব বাড়িয়েছে সরকার। কৃষকদের নানা ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তর। এতে আধুনিক ও সঠিক চাষ পদ্ধতিতে কৃষিতে সুফলও মিলছে।
ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা হোসেনেরখিল এলাকার কৃষক শাহ আলম মুন্সী ও আলী আহমদ। দুই জনই দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন সুদূর প্রবাসে। দেশে ফিরে তাঁরা কিছু একটা করার চিন্তা করেন। যার ফলে তারা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের পরামর্শে কৃষিতে মনোযোগ দেন। শুরু করেন মাল্টা ফলের চাষ। এতে ফলনও হয়েছে আশা জাগানো। তাঁদের দেখে এলাকার অনেক যুবক এখন মাল্টাসহ মিশ্র ফল চাষে ঝুঁকছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে যায়, পাহাড়ি টিলা ও টিলা ঘেঁষা পতিত জমিতে সারি সারি মাল্টা গাছ। সেসব গাছে থোকা থোকা গাঢ় সবুজ রঙের মাল্টা ঝুলছে। এ মাল্টার রঙ সবুজ হলেও স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। তবে চাষিরা জানান, কেমিক্যাল দিলে বাজারে থাকা বিদেশি মাল্টার মতো রঙ আনা যায়। কিন্তু তারা সেটা না করে সবুজ রঙের মাল্টাই সাধারণ মানুষের মন আকৃষ্ট করাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে পরিপূর্ণ মাল্টার রঙ কিছুটা হালকা কাঁচা হলুদের রঙ আসে। এসব মাল্টা বেশ চাহিদাও রয়েছে।
বাগান ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় মাল্টা চাষী শাহ আলম মুন্সী ও আলী আহমদের সাথে। ফাতেমা এগ্রোর মালিক শাহ আলম মুন্সি জানান, তিনি দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে কর্মরত ছিলেন। করোনার সময় দেশে ফেরত এসে হতাশায় ভুগছিলেন। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে পরামর্শ করে ১ বিঘা জমিতে বারি-১ মাল্টা চাষ শুরু করেন। জমিতে ৫৫০ টি মাল্টা গাছ রোপন করে প্রথম বছরে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি হয়েছিল। প্রথম বছরে চারা রোপণ ও পরিচর্যায় বিনিয়োগ করতে হয়েছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। পরবর্তী বছর বাগান থেকে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি হয়েছে। এতে ব্যাপক সফলতার মুখ দেখেন তিনি। তিনি জানান, বর্তমানে তার বাগানে ৩-৪ জন লোক নিয়মিত কাজ করে। এছাড়াও পরিবারের লোকজনও বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা করে। চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় ২০ লক্ষ টাকার মতো মাল্টা বিক্রির আশা করছেন। এছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাঁকে নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতাও করেন বলেন জানান তিনি।'
মাল্টা চাষী আলী আহমদ জানান, 'বিগত ১৭ বছর পর মরুর দেশ সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে নিজের জমিতে মাল্টা চাষ করেন তিনি। কৃষি অফিসের পরামর্শে শখের বশে ৪০ শতাংশ জমিতে প্রায় ৬শ' মাল্টা চারা রোপন করেন। চারা রোপনের প্রথম বছর ফলন না হলেও পরবর্তী বছরে এসে সফলতার মুখ দেখেন তিনি। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মাল্টা বিক্রি করেছি। আশা করছি ১০লক্ষ টাকার পরিমান মাল্টা বিক্রি হবে। তিনি, মাল্টার পাশাপাশি জমিতে পেঁপে গাছসহ মিশ্র ফলের বাগান করেছেন। পেঁপেরও ভালো ফলন হয়েছে। তিনি আশা করছেন ৮ টনের মতো পেঁপে বিক্রি করবেন। তার বাগানে ৩ জন লোকের নিয়মিত কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, হেঁয়াকো সুবলছড়ি ব্লকের কৃষক শাহ আলম মুন্সী ও আলী আহমদকে শুরু থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়াও মাল্টাসহ বিভিন্ন ফল বাগান করতে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আসছে উপজেলা কৃষি অফিস। যার ফলে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকে। গত কয়েক বছরে উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে ৩'শর অধিক ছোট বড় মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। আমরা চেষ্টা করছি সকলকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, শাহ আলম মুন্সী ও আলী আহমদ বানিজ্যিক কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা ব্যাকস্টপিং করেছি, সেখানে জলবায়ু সহিষ্ণু স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে। দাঁতমারা এলাকায় কৃষি বিপ্লব হয়েছে।