আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচন

শেষ মুহূর্তে প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা, সেবা ও উন্নয়ন চায় ভোটাররা

সালাহউদ্দিন জিকু, ফটিকছড়ি | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৫ মার্চ ২০২৩ ১১:৫৩:০০ পূর্বাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

 

 

প্রচার-প্রচারণার শেষ মুহূর্তে বেশ জমে উঠেছে ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচন। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের মন জয়ের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। শেষ মূহুর্তের প্রচারণায় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী আলাপন। এলাকার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে ছুটছেন প্রার্থীরা দোকানে দোকানে, বাড়িতে বাড়িতে। তবে কাঙ্ক্ষিত সেবা ও এলাকার উন্নয়ন করতে পারবে এমন প্রার্থীকে বেছে নিতে চান পৌরবাসী।

 

আগামীকাল ১৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএমে) অনুষ্টিত হবে নাজিরহাট পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচন। আর এই ভোট যুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটাররা বলছেন, সুখ-দু:খে যে প্রার্থী পাশে থাকবেন বেছে নিবেন তাকেই। এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে পৌর-শহরসহ পৌরসভার সমস্ত অলিগলি সাঁজ সাঁজ রব। অনেকে আবার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালাচ্ছেন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। বেশ জমে উঠেছে পৌরসভার নির্বাচন। প্রার্থীরা ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন নানান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। নির্বাচিত হলে আধুনিক পৌরসভা গড়া ও সব ধরণের নাগরিক সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। উঠান বৈঠক, চা-চক্র ও কুশলাদি বিনিময়সহ সামাজিক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন মানুষের কাছে। ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

 

অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে মেয়র- কাউন্সিলর মিলিয়ে ১০টি পদে ৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একে জাহেদ চৌধুরী, জগ মার্কা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট ইসমাইল গণি, নারিকেল গাছ প্রতীকে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মোবাইল প্রতীকে আনোয়ার পাশা, চামচ প্রতীকে  প্রবাসী জাহাঙ্গীর চৌধুরী।

 

জানা যায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ডজন খানেক নেতাকর্মী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র কিনেন। তবে শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রতীক পান সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট এ কে জাহেদ চৌধুরী। দলীয় পদ পদবীর বাইরেও সজ্জন ব্যক্তি বলে পরিচিত জাহেদ চৌধুরী। তবে বিএনপি- জামায়াত ও হেফাজত অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত নাজিরহাটে পূর্বসূরীদের মতো তার জন্যও নির্বাচনী বৈতরণী পার করা কঠিন হবে। এ ছাড়া আছে দলের  দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। এরমধ্যে দলের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী দানবীর আনোয়ার পাশার কারণে তাকে সবচেয়ে বেশি বেগ পোহাতে হবে। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার পাশার পক্ষে নাজিরহাটের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা তৌহিদুল আলম বাবুর অনুসারীদের পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে বলেও দ্রুতি আছে। গতবারের পৌরসভা নির্বাচনেও তৌহিদ বাবুর অনুসারীরা নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে গিয়ে পাশার পক্ষে কাজ করার ইতিহাস আছে। 

 

এই নির্বাচনে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন জগ মার্কা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট ইসমাইল গণি। সৎ ও নীতিবান বলে পরিচিত এই তরুণ আইনজীবী অল্পদিনেই  চষে বেড়িয়েছেন পৌরসভার অলিগলি। বর্তমানে কোনো রাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও এক সময়  শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। যে কারণে স্থানীয় জামায়াত-শিবির ও বিএনপি সমর্থকদের সমর্থন পাচ্ছেন। এ ছাড়া নিজে কওমি ঘরানার হওয়ায় এবং বাকি ৪ মেয়র প্রার্থী তরিকতপন্থি হওয়ায় কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হেফাজত সমর্থকদের বড় অংশের ভোট তার পক্ষে যাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

 

এদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন না করার ঘোষণা দেওয়ায় মেয়র পদে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করছেন পৌরসভা বিএনপি’র সদস্য ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন চৌধুরী প্রকাশ ঝংকার নাছির। দলীয় কার্যক্রমে তেমন তাকে দেখা না গেলেও ভোটের বৈতরণী পার হতে নিজেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বলেই দাবি করছেন স্থানীয় ঝংকার সিনেমা হলের মালিক এই ব্যবসায়ী। যদিও উপজেলা ও জেলা বিএনপি’র দাবি নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচনে তাদের কোনো প্রার্থী নেই। তবে, বিএনপি নেতা সরওয়ার আলমগীর গোপনে ভোটের মেকানিজম করছে বলে লোকমুখে শুনা যাচ্ছে।

 

অন্যদিকে, নারী ভোটারদের পক্ষে টানতে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীদের মা, স্ত্রী-কন্যা। এছাড়া নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেত্রী সাবরিনাসহ  মহিলা আওয়ামী, যুবলীগের নেত্রীরা। তারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তারা পাশাপাশি উন্নয়ন, নারীর অধিকার এবং নারী কেন্দ্রীক প্রার্থীদের অঙ্গীকারগুলো তুলে ধরছেন। এছাড়াও দিনরাত প্রচারণা চালাচ্ছেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা-সমাবেশেও অংশ নিচ্ছেন।

 

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোটের দিন ২২ টি কেন্দ্রে ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। এছাড়াও ভোটার ও ভোটগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশ ও র‌্যাবের মোবাইল টিম ও ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে ভোটের দিন। 

 

ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা  মঙ্গলবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ৪৪ হাজার ৭শ’ ৮৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৯শ’ ৩০ জন ও নারী ভোটার ২০ হাজার ৮ শত ৫৬ জন। এই নির্বাচনে মেয়র পদ ছাড়াও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮ জন এবং সাধারণ সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

 

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাব্বির রাহমান সানি জানান, 'সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনে আমিও এসিল্যান্ডসহ আর

৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। এছাড়াও আচরণবিধির মোবাইল কোর্ট চলমান আছে। এবং প্রার্থীদেরকে আচরণবিধি লঙ্ঘন না করার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।'

 

জেলা সহকারী আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার তারিফউজ্জামান জানান, পৌর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোট উপলক্ষে নেওয়া হচ্ছে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতে সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় টহলে থাকবেন পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। পুরো পৌরসভা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে, এক্ষেত্রে তিনি প্রার্থী ও ভোটারদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।