তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্লোভ এবং শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণকামী, রাজনীতিক মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী শুধু চট্টগ্রামের গৌরবই নন তিনি উপমহাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায় চির অক্ষয় হয়ে থাকবেন।
তাঁর মতো জনদরদি ও পরিশুদ্ধ রাজনীতিকের অভাব এখন রয়েছে। তিনি কখনো ভোগ ও বিলাসের জন্য রাজনীতি করেননি। মানবকল্যাণই ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত।
শুক্রবার (১ জুলাই) বিকেলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মন্ত্রী, জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার তথা বাঙালি জাতির স্বাধীন জাতিসত্তা গঠনের ব্রত নিয়ে। সেই ব্রত পালনে জহুর আহমদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমরা জানি চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী, এমএ আজিজ, এমএ হান্নান, এমএ মান্নান, আতাউর রহমান খান কায়সার, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইসহাক মিয়া, কাজী ইনামুল হক দানুর সুযোগ্য নেতৃত্বে চট্টগ্রাম আন্দোলন, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের যোগ্য উত্তরাধিকার হতে পেরেছেন। ইতিহাস জানান দেয়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রথম চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে পাঠিয়েছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধু ও জহুর আহমদ চৌধুরী একাত্মা ও অবিচ্ছিন্ন।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশের এত সাফল্য অর্জন ও কীর্তির আরেকটি নিদর্শন প্রমত্তা পদ্মার বুকে বহুমুখী সেতু নির্মাণ। এই সেতুটি শুধু ইট, পাথর, কংক্রিট ও সিমেন্টের স্থাপনা নয়, এটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির করিডোর। অথচ বিএনপি ও কথিত সুশীল সমাজ পদ্মা সেতু হোক চায়নি। কারণ তারা বাংলাদেশও চায় না। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অসাধারণ উন্নয়নের জন্য এরা ঈর্ষান্বিত হয়ে মেগা মিথ্যাচার করছে। এদের প্রতিহত করতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব মুছে যাবে।
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জহুর আহমদ চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান হিসেবে পিতার স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করাটা আমার জন্য মহান প্রাপ্তি। পিতার সাধারণ জীবন-যাপন এবং রাজনৈতিক সততা আমি খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। তাঁর অসংখ্য স্মৃতি সর্বক্ষণ চোখের সামনে ভাসে। জহুর আহমদ চৌধুরী একজন সৃজনশীল রাজনীতিক ছিলেন। আজকের দিনের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তাঁর পথ অনুসরণ করার ঐতিহাসিক দায় রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা স্তম্ভ। তাঁর জীবনকর্ম নিয়ে বহু আলোচনা হয়। প্রশ্ন জাগে তা আমরা কতটুকু অনুসরণ করি বা পালন করি। জহুর আহমদ চৌধুরীর মতো রাজনীতিকেরা ভোগ বিলাসের জন্য রাজনীতি করেননি। অর্থবিত্তের প্রতি কোনো মোহ ছিল না। দলের পদ-পদবিকে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেননি। আমরা যারা আজ রাজনীতি করি এই সততা ও পবিত্রতা কতজন ধারণ করি? মনে রাখতে হবে, আমাদের মধ্যে নেতৃত্বে নিয়ে যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক না কেন, জনগণ নিবেদিত এবং তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাসভাজন ছাড়া কখনো সফল রাজনীতিক হতে পারবো না। আমাদের আরো মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ এবং এই যাবৎকালের সব অর্জন ও প্রাপ্তি ধুয়ে মুছে যাবে। এ কারণে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই নির্বাচনে চট্টগ্রামের মহানগরীর আওতাধীন ৩টি ও নগরী সংলগ্ন ৩টি আংশিক সহ ৬টি আসনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যাকে দলীয় প্রতীক দেবেন তাঁকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে এখনি কর্ম উদ্যোগ নিতে হবে।