ডলার বাঁচাতে নিয়ম করে লোডশেডিংয়ের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে। তাই মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠ কর্মকর্তাদের।
এতে বেড়ে যাচ্ছে সামগ্রিক ব্যয়। সরকার ঘোষিত নিয়মতান্ত্রিক লোডশেডিং ঢাকাতে সহনীয় হলেও উপজেলা পর্যায় অসহনীয়। কারণ, অন্তত ৭ ঘণ্টার লোডশেডিং। কোথাও কোথাও সময় লাগে তারও বেশি। এ অবস্থায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হলেও দিনশেষে ইসি সার্ভারের কাজ করতে পারছেন না মাঠ কর্মকর্তারা। এছাড়া ভোটার নিবন্ধনের কাজও কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে। এতে ভোটারের তথ্য ইসির সার্ভারে আপলোড করতেও হচ্ছে সমস্যা। ফলে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ অবস্থায় উপজেলা পর্যায়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ নির্বিঘ্ন রাখতে সিদ্ধান্ত হয়েছে জেনারেটর কেনার। এক্ষেত্রে একঘণ্টা জেনারেটর চালাতে ৫ থেকে ৬ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন পড়ে। এতে ভোটার তালিকা হালনাগাদের ব্যয় বেড়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসির মাসিক সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, ঢাকার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেছেন- হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বিধায় প্রতি উপজেলায় টিম ভিত্তিক জেনারেটর সরবরাহ করা প্রয়োজন।
রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে অনেকসময় বিদ্যুৎ না থাকায় রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। তাই প্রতিটি রেজিস্ট্রেশন টিমে জেনারেটর সরবরাহ করা প্রয়োজন। তবে ইসির বাজেট শাখার উপ-সচিব জানান, ইতিপূর্বে শুধুমাত্র বরিশাল অঞ্চলে জেনারেটর ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, বরিশাল অঞ্চলের ২২টি উপজেলায় জেনারেটর ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জেনারেটরসমূহ বড় হওয়ায় বহনযোগ্য নহে। সেই সঙ্গে জ্বালানি খরচ অনেক বেশি (৫লিটার/ঘণ্টা)। তাই সুষ্ঠুভাবে ভোটার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় জেনারেটর সরবরাহ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় মাঠ পর্যায়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই দ্রুত জেনারেল কেনা প্রয়োজন।
সমন্বয় সভাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে সহজে বহনযোগ্য জেনারেটর কেনার। এজন্য সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে কি ধরণের জেনারেটর কেনার প্রয়োজন সে বিষয়ে চাহিদাপত্র পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এক নির্দেশনায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের বলেছেন, সহজে বহন যোগ্য জেনারেটর ক্রয়ের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্ধারিত স্পেসিফিকেশনসহ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গত ২০ মে থেকে দেশের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন, যা চলবে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। এবার হালনাগাদে ভোটার বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৬ জন ব্যক্তিকে হালনাগাদের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। এবারও গতবারের মতো তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে যাদের বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে তখন তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন। এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদে ৫৫ হাজার ২শ’ জন তথ্য সংগ্রহকারী, ১২ হাজার সুপারভাইজার পুরো কাজটি তুলে আনবেন। এক্ষেত্রে দুই হাজার ৫শ’ জন ভোটারের জন্য ১ জন তথ্য সংগ্রহকারী এবং ১২ হাজার ৫শ’ ভোটারের বিপরীতে এক জন সুপারভাইজার রয়েছে।
এছাড়া এসব তথ্য সার্ভারে এন্ট্রি করার জন্য ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, পরিবহন, সার্ভার পরিচালনা, নিবন্ধন কেন্দ্র পরিচালনা, আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের তদারকি, সমন্বয়-যোগাযোগ ও জ্বালানীখাত, টেকিনক্যাল সাপোর্ট ইত্যাদি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে ভোটার নিবন্ধন ও বিভিন্ন ভাতা খাতে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ৮১ হাজার ৯শ’ টাকা। এছাড়া তথ্য সংগ্রহ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর সমন্বয়, যোগাযোগ ও অন্যান্য খাতে ধরা হয়েছে অবশিষ্ট টাকা।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে পাঁচবার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল ও ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।
বর্তমানে ভোট আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষটির তথ্য ভাণ্ডারে মোট ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটারের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন এবং মহিলা ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন। হিজড়া ভোটার আছে ৪৫৪ জন।