আজ ২৫ শে আগস্ট। মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার ৫ বছর। রোহিঙ্গারা এদিনকে 'গণহত্যা' দিবস হিসেবে ঘোষনা করেছে। তাই এদিনে রোহিঙ্গারা মসজিদ-মাদরাসায় ও ঘরে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করে থাকেন। গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে রোহিঙ্গা নেতারা কর্মসূচী হাতে নিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি না থাকায় পালন করছেনা। তবে উখিয়া উপজেলার কয়েকটি ক্যাম্পে কর্মসূচী পালন করার খবর পাওয়া গেছে।
২৫ আগস্ট সকালে সরেজমিন টেকনাফ উপজেলার শালবাগান (নং- ২৬) ও জাদিমুরা (নং-২৭) রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা প্রতিটি পয়েন্টে নিয়োজিত রয়েছে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে টহল জোরদার করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিন পরিদর্শন ও তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই তারা। এভাবে বন্দী জীবন থেকে মুক্ত হতে চাই। দ্রুত টেকসই নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য ইউএনএইচসিআর সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প- ২৬ এ বসবাসকারী আনজুল হোসেন বাংলাদেশ সরকার ও জনগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বিগত ৫ বছরে ছোট্ট কুটির ঘরে দুঃখ দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করে যাচ্ছি। অবাধ চলাচল আর জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা পেলে স্ব-ইচ্ছায় দেশে যেতে আগ্রহী। এভাবে বার বার মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতন নিপীড়ন হয়ে এদেশে আসতে চাই না। তাই নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবী জানাচ্ছি।
একই ক্যাম্পের ফয়েজুল ইসলাম জানান, নিজ ঘরবাড়ি ফেরত, রোহিঙ্গা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি, মগদের মতো অবাধ চলাচলের অধিকারসহ সকল সুযোগ সুবিধা দিলেই এখনই মিয়ানমার থেকে যেভাবে এসেছি সেভাবেই ফিরে যাব।
২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) বজরুল ইসলাম বলেন, গনহত্যা দিবস পালন করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে অনুমতি না পাওয়া কর্মসূচী গ্রহন করা হচ্ছেনা। তিনি আরো জানান, ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতে চাইনা। এ জীবন আমাদের কাম্য নয়। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দ্বারা ১৮ হাজার নারীদের ধর্ষণ , ২৫ হাজার মৃতদেহের সন্ধান, সেখানকার কারাগারে শতাধিক রোহিঙ্গাদের পিটিয়ে হত্যা, ৭৫ হাজার বাড়িঘর ও ৭২ হাজার দোকান পুড়িয়ে দেয়। এসব নির্যাতনের কারণে পালিয়ে আসতে হয়েছে। নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিভাবে হাত বাড়ানোর অনুরোধ তার।
এছাড়া রোহিঙ্গা নেতারা দাবী করেন, ২০১৭ সনে সেনাদের হাতে ১০০ নারী ধর্ষিত, ৩০০ গ্রামকে নিশ্চিহ্ন, ৩৪ হাজার শিশুকে এতিম, ১০ হাজারের বেশী রোহিঙ্গাকে হত্যা, ৯ হাজার ৬০০ মসজিদ, ১২০০ মক্তব, মাদ্রাসা ও হেফজখানায় অগ্নিসংযোগ, আড়াই হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে বন্দি ও ৮ লাখের বেশী রোহিঙ্গা আরকান রাজ্য থেকে বাস্তচ্যুত হয়।
এদিকে রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয়দের ভোগান্তি
দিন দিন চরমে পৌঁছেছে। সর্বদা আতংকের পাশাপাশি কর্মসংস্থান দখলে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আর মাদককারবারে জড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পে খুন, গুম, মুক্তিপন আদায়, ধর্ষন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।
রোহিঙ্গাদের এই কারণে দিন দিন ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরার কারণে স্থানীয়দের যাতায়ত ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশী দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সস্তায় দখল করে নিয়েছে শ্রমবাজার।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের ৩০টিরও বেশী অস্থায়ী ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত ২০১৭ সনের ২৫ আগস্ট দেশটির রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরুর পর ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গা এসব শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা সব ধরনের সরকারি বেসরকারি সুযোগহ সুবিধা পেলেওে এভাবে অনিশ্চিত ভাসমান অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে চাই না রোহিঙ্গারা।
আরসা নামক একটি উগ্রপন্থি সংগঠনের সদস্যরা সেনা ছাউনিতে হামলার অজুহাতে গত ২০১৭ সনের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার সেনা বাহিনী। দেশটির সেনা, বিজিপি, ও উগ্রবাদী রাখাইন যুবকরা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা নর-নারীকে নির্যাতন আর হত্যা করে।