নগরের খুলশী থানাধীন ঝাউতলা এলাকায় গত ৪ ডিসেম্বর ট্রেন যাওয়ার সময় সিগন্যাল অমান্য করে রেল ক্রসিং পার হতে গিয়ে বাস-অটোরিকশা-ডেমু ট্রেনের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হন।
৬ ডিসেম্বর নগরের কদমতলী রেল গেটে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ১৪০ নম্বর শাটল ট্রেনের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
চালক আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ইচ্ছুক প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে শাটল ট্রেন নগরের অক্সিজেন এলাকায় পৌঁছায়। শাটলের হুইসেলের শব্দ শুনেও সিগন্যাল অমান্য করে একটি বাস রেললাইনের ওপর উঠে যায়। চারিদিকে যানজট থাকার কারণে কোথাও যেতে পারেনি বাসটি। ট্রেন চালকের দক্ষতায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যায় হাজারও শিক্ষার্থী।
রেললাইনের দুইপাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় হরহামেশাই ১৪৪ ধারা জারি থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, এই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের ১০১ ধারায় গ্রেফতার করা যায়। এমনকি এই সীমানার ভেতরে গবাদি পশু চরলে আটক করে তা বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধানও রয়েছে। কিন্তু এ আইন প্রতিনিয়তই ভঙ্গ করছেন পথচারীরা। তাই প্রতিনিয়তই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
রেললাইনে বসছে বাজার, রেললাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বস্তি, চলছে মানুষের আড্ডা। কানে ফোন গুঁজে কথা বলা কিংবা রেললাইন ধরে হেঁটে চলাও নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। এ কারণে প্রায়ই মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছে৷
সরেজমিন দেখা যায়, নগরের ষোলশহর, দুই নম্বর গেইট এলাকায় রেললাইনের পাশেই অবৈধ বাজার ও দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান ঘিরে চলে মাদকের বিকিকিনি। এখানে রেললাইন পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। অনেকে পথের দূরত্ব কমাতে রেললাইনকে হাঁটার পথ হিসেবে ব্যবহার করছেন।
নগরের অক্সিজেন মোড়, ঝাউতলা, মোহরা রেল ক্রসিংসহ বিভিন্ন এলাকায় রেললাইনের ওপরে বসে গল্প করার দৃশ্য দেখা গেছে। এছাড়া রেলস্টেশন এলাকায় ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও কেউ তা ব্যবহার করছেন না। রেললাইনের ওপর দিয়েই তারা গন্তব্যে যাচ্ছেন। রেললাইনে জারি থাকা ১৪৪ ধারা সম্পর্কে জানেনই না পথচারীরা। রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চললেও তা কাজে আসছে না।
হামজারবাগ ও অক্সিজেন রেলক্রসিং এলাকায় বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে রেললাইনের ওপর বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রেললাইন ধরে চলাচল বা বসে থাকা যে নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ, এমন আইন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই তাদের।
মিনহাজ কাদের নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় ১৪৪ ধারা, সেটা আপনার মুখেই শুনলাম। এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকেও এ ধরনের কোনও প্রচারণা দেখিনি। ট্রেন আসার শব্দ শুনে সবাই যেমন নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়, আমিও তেমনটা করি।
আরেক পথচারী বলেন, রেললাইনে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে জানিয়ে দেওয়া জরুরি। শুধু নথিতেই আইন সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, তার ন্যূনতম প্রয়োগও দরকার। এই ধারা প্রয়োগ করা হোক, নাহলে বাতিল করা হোক। এভাবে ১৪৪ ধারাকে অপমানিত করার কোনও মানে হয় না। নিরাপদ ট্রেন চলাচলের পরিবেশ তৈরি করা না হলে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘই হবে।
রেলওয়ে প্র্বূাঞ্চলের এক কর্মকর্তা জানান, ১৮৬১ সালের ৫ নম্বর আইনের ১২ নম্বর ধারা মোতাবেক রেললাইনের দুইপাশে ১০ ফুট করে এলাকার মধ্যে রেলের কর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষ কিংবা গবাদিপশুর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওই এলাকায় সব সময়ই ১৪৪ ধারা জারি থাকে। সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে আইনের ১০১ ধারায় যে কাউকে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু উল্টো ঝামেলা পড়ার আশঙ্কায় রেলওয়ে পুলিশ এ আইন প্রয়োগ করে না।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, জনগণকে সতর্ক করতে আমরা চেষ্টা করেই যাচ্ছি। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সভা-সমাবেশ করছি। মসজিদ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বস্তির লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমরা রেলওয়ের আইন ও শাস্তি সম্পর্কে অবহিত করছি।