দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়াটা যাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা! এমনই দুই শিক্ষার্থী আবার হোঁচট খেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি হতে এসে। গত বছর অক্টোবরে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই শিক্ষার্থীর মেডিক্যালের ভুল রিপোর্টের কারণে চবিতে ভর্তি হতে লেগে গেছে প্রায় ৯ মাস।
দীর্ঘদিন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এবং আন্দোলন করে সম্প্রতি ভর্তির অনুমতি পান তারা। অবশেষে ২৭ জুলাই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় দুজনের।
জন্মান্ধ হয়েও একে একে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেছেন সোহেল রানা ও উৎস সিদ্দিকী। এরপর ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলেও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালের ভুলে ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হয় তাঁদের। মেডিক্যাল থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর স্বীকৃতি না পাওয়ায় শুরু হয় নিজেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রমাণের চেষ্টা। যে বিড়ম্বনায় আগে কখনো পড়তে হয়নি তাদের। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ার সব ধরনের নথি জমা দিয়েও যখন ভর্তির সুযোগ মিলছিল না, তখন ভর্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন তারা।
গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন চবি শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে এ বিষয়ে প্রশাসনকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। মানববন্ধনে চবি প্রতিবন্ধী ছাত্রসমাজ, থার্ড আই এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মেডিক্যালের ভুল রিপোর্ট সংশোধন এবং এ বিষয়ে প্রশাসনকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে তিন শিক্ষার্থীর ভর্তির দাবি জানানো হলেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দুইজন। এর মধ্যে সোহেল রানা ভর্তি হয়েছেন চবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে এবং উৎস সিদ্দিকী ভর্তি হয়েছেন সমাজতত্ত্ব বিভাগে। এছাড়া ভর্তির সুযোগ পাননি কাজিম উদ্দিন নামে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। জানা গেছে মেডিক্যালের সংশোধিত রিপোর্টে তিনজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রমাণ হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে পিছিয়ে থাকায় প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তি হতে পারেননি কাজিম উদ্দিন। অপরদিকে ১৭ জনের প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় এ দুই শিক্ষার্থীকে বিশেষ ভর্তির সুযোগ দিয়েছে চবি কর্তৃপক্ষ।
ভর্তির সুযোগ পাওয়া সোহেল রানা বলেন, অবশেষে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এটি আমার জন্য অনেক আনন্দের। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য আমাকে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। এসময় যারা আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল চেকআপের পর ডাক্তারের ভুল রিপোর্টে আমার স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রথমদিকে ভেঙে পড়েছিলাম খুব। ঠিক তখনই আমার স্কুলের আল আমিন ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। চবি প্রতিবন্ধী ছাত্রসমাজের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। এছাড়া চবির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করা থার্ড আইর প্রতিষ্ঠাতা মাসরুর ইশরাক ভাইয়ের সহযোগিতাও ছিল অনেক বেশি। এরপর যখন আমাদের পুনরায় মেডিক্যাল টেস্ট করানো হলো, তখন রিপোর্ট ঠিক আসায় তারা আরও তিনবার চেকআপ করেছিল। তিনবারই তাঁদের আগের রিপোর্টটি ভুল প্রমাণ হলো।
সোহেল রানা বলেন, আমার শিক্ষার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য যারা আমাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এছাড়া চবি উপাচার্য মহোদয় এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যাদের সহযোগিতায় আমি প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পুনরায় ফিরে পেয়েছি। আমি যেন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্ঞান অর্জন করে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি এবং দেশের জন্য কাজ করতে পারি সেই দোয়া চাই।
চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, প্রথমে মেডিক্যালের রিপোর্ট অনুযায়ী যেহেতু তারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রমাণিত হয়নি, তাই তাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরে পুনরায় তাদেরকে মেডিক্যাল চেকআপ করে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তারা ভর্তির যোগ্য প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।