আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মায়ের হাতে ছেলে খুন!

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১০ অগাস্ট ২০২২ ০৭:৫৩:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

নগরের আকবর শাহ থানায় চুরির অভিযোগ পেয়ে কিশোর ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে মায়ের বেদম পিটুনিতে মো. হাছান (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে বিশ্ব কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে।

মো. হাছান নগরের পাহাড়তলী থানার ওয়ার্লেস কলোনি এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেনের ছেলে। তাদের বাড়ি মাগুরা জেলায় বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় হাসানের মা কুলসুম বেগম (৩৮) ও মামা ফারুক ইসলামকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে হাসানের মা কুলসুম বেগম মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাছানের বাবা বেলালের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি আল হেরা মসজিদ গলিতে আলাদা বাসায় বসবাস করেন। ভাই ফারুকও পাশাপাশি আরেক বাসায় থাকেন। হাছান নগরের ৪ নম্বর রুটের বাসের চালকের সহকারী হিসেবে একসময় চাকরি করত। কিন্তু বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর কুলসুম তাকে দৈনিক ১৫০ টাকা বেতনে হাটহাজারী উপজেলায় একটি কুলিং কর্নারে চাকরি নিয়ে দেন। ওই কুলিং কর্নারটি কুলসুমের বাবার।

রোববার (৭ আগস্ট) হাছান কুলিং কর্নারে তার মামা নুরনবী ইসলাম সোহেলের মানিব্যাগ থেকে ১ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে শহরে মায়ের বাসায় চলে আসে। সোহেল বিষয়টি কুলসুমকে জানানোর পর তিনি ক্ষুব্ধ হন। সোমবার রাত ১১টার দিকে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে বেদমভাবে মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দেন। এতে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়। এতে রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে হাছান। ছেলের সাড়াশব্দ না পেয়ে কুলসুম ভয় পেয়ে যান। পরে কুলসুমের ভাই ফারুক বাসায় গিয়ে দেখেন ছেলে হাছান গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে বেলাল দ্রুত কুলসুমের বাসায় যান।  

ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, বাসার চালের ভেন্টিলেটরে লোহার রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে হাছান দাবি করে মা। কিন্তু হত্যার ধরন দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। ভয় পেয়ে কুলসুম তার ভাই ফারুককে ডেকে আনেন। খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে সেটাকে প্রচারের পরিকল্পনা করেন। হাছানের মৃতদেহ বাসার ভেন্টিলেটরের লোহার রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। রাত পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ তারা বাসার বাইরে এসে চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। প্রতিবেশী আসমা আক্তার এলে তাকে বাসার বাইরে রেখে দরজার ফাঁক দিয়ে ওড়না কেটে মরদেহ নিচে নামায়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাছানের বাবার দায়ের করা মামলায় কুলসুম ও ফারুককে গ্রেফতার দেখিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন কুলসুম। পরে দুইজনকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

 

 

 



সবচেয়ে জনপ্রিয়