খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলা গচ্ছাবিল এলাকায় মানিকছড়ি ইসলামী দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম মাদ্রাসার সুপার-শিক্ষক নিয়োগসহ নানা অপকর্মে হতাশ এলাকার সচেতন মহল ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, মানিকছড়ি ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। যাহা মাদ্রাসা কোড: ২০৩৮৮, ইআইআইএন:১০৫৮১৫, এমপিও কোড: ১০৬৮১৫২১২২। শুরু থেকে প্রভাব আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কখনো পিতা আবুল কালাম(সাবেক চেয়ারম্যান) আবার কখনো পুত্র উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম মাদ্রাসার সভাপতি বনেন।
নিয়োগ ও যোগদান বিহীন অবৈধ সুপারের আবেদনের মাধ্যমে মাদ্র্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন নিয়ে যদিও রফিকুল ইসলাম এডহক কমিটির সভাপতি কিন্তু তার দাপটে সকালে চাকুরী হলেও বিকালে নাই। এমন ঘটনা অহরহ ঘটেছে। দফায়-দফায় সুপার নিয়োগ হয়েছে ৫-৭ জন। যাদের বৈধ নিয়োগপত্র নাই বলে দাবী করছে প্রতিষ্ঠাতা সুপার/সম্পাদক মোঃ নাছির উদ্দিন খান।
মোঃ রফিকুল ইসলাম মাদ্রাসাটি নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিসেবেই মনে করছেন। মাদ্রাসা বোর্ডের নীতিমালা ও আইনের কোন নির্দেশনা এখানে মানা হয় না। সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম নিজে এডহক কমিটির সভাপতি যাহা মাত্র ৬ মাসের জন্য। সভাপতি মনোনয়ন সহ অনুমোদিত বর্তমান এডহক কমিটি গঠনকারী ২জন সুপারের বৈধ কোন নিয়োগ পত্র ও দায়িত্বের বৈধতা ছিল নেই।
সাবেক সুপার আবুশাহীন ও মামুনুর রশীদসহ শিক্ষক আবুল কালাম দাবী করেন সভাপতি যিনি নিজেই বৈধ নন, অন্যকে অবৈধ বলা কতটুকু যৌক্তিক এমনটাই অভিযোগ করে আরো প্রতিষ্ঠাতা সুপার নাছির উদ্দিন খান বলেন কিছুদিন মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবু শাহিন ও মোঃ মামুনুর রশীদ, জানান আমাদেরকে নিয়োগ দিয়েছে সাধারণত একটি রেজুলেশন করে আর কোন কিছুই দেওয়া হয় নাই। বৈধ নিয়োগ পত্র চাইলে সভাপতি নানা তালবাহানা করে। আমরা কিছুদিন দায়িত্বে পালন করলেও আমাদের বৈধ নিয়োগ চাইলে মোঃ রফিকুল ইসলাম (বর্তমান সভাপতি) আমার নিকট মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। আমি/আমরা অপরাগতা স্বীকার করলে আমাদের বাদ দিয়ে অন্য জনের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা বিনিময় সুপার নিয়োগ দেন সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম।
যখন বৈধ নিয়োগপত্র, বেতন পাচ্ছিলাম না মাদ্রাসা থেকে চলে আসবো এই সময় খালি স্টাম্পে স্বাক্ষর রাখেন সভাপতি।
শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন রেজুলুশনে করে শিক্ষক নিয়োগ হলো বর্তমান সভাপতি একটি কৌশল। বৈধ কোন নিয়োগ পত্র দেন না। যে টাকা বেশি দিতে পারে সেই অত্র মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতে পারবেন। এমনটাই দাবী করছিলেন সাবেক সুপার আবু শাহীন, মোঃ মামুনুর রশিদ, আবুল কাশেম, শিক্ষক তাজুল ফরাজিসহ আরো অনেকেই।
অত্র মাদ্রাসার সুপার নাছির উদ্দিন সভাপতির নিয়োগ বাণিজ্যে ও মনগড়া সুপার নিয়োগ, এমপিওতে শিক্ষক হালনাগাত নামে শিক্ষকদের তালিকার প্রদানের বিরোধীতা করে হাইকোর্ট একটি পিটিশন ৯৫৮৮/২০২২ মামলা করেন।
মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার আগ পর্যন্ত সভাপতি দফায়-দফায় সুপার, শিক্ষক, শিক্ষিকা, কর্মচারী নিয়োগ দিচ্ছেন কিভাবে এইটা দেখার কেউ নেই। এই শিক্ষক নিয়োগে আছে নানা ত্রæটি ব্যকডেইটে কিছু ভুয়া বেনামী পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের তারিখ মতে অনলাইন পত্রিকায় অত্র নিয়োগ বিজ্ঞাপন নাই। যাহা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভুয়া প্রক্রিয়ায় নিয়োগ।
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনহিন সভাপতি তিনি মনগড়া যোগ্যতাবিহীন সুপার ও শিক্ষক নিয়োগ করছেন। বর্তমান অস্থায়ী সুপার সাইফুল ইসলাম আরমান সুপার হওয়ার শিক্ষকতা যোগ্যতা নাই বলে দাবী করছেন অত্র মানিকছড়ি ইসলামী দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোঃ নাছির উদ্দিন খান। তিনি আরো বলেন বর্তমান সুপার/সভাপতি যোগসাজশে এমপিও হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষকের হালনাগাদ তালিকা কাগজপত্র জমার অংশ হিসাবে নতুন শিক্ষক ও শিক্ষিকা নিয়োগের নামে বাণিজ্যে নেমেছেন সভাপতি। এমনটাই বলছিলেন প্রতিষ্টাতা সুপার নাছির উদ্দিন খান। তিনি আরো বলেন এইসব বিষয় নিয়ে আমি আদালতে মামলা করেছি।
বর্তমান সুপার সাইফুল ইসলাম আরমান যেহেতু তিনি শিক্ষকতার যোগ্যতার কারণে কখনো সুপার হতে পারবেন না। তাই নিয়োগ বানিজ্যে অংশ গ্রহনেণর মাধ্যমে নিজেই লাভবান হচ্ছেন। সাবেক সুপার নাছির উদ্দিনসহ অভিযোগ করে বলেন আবু শাহিন, মোঃ মামুনুর রশিদ, শিক্ষক আবুল কাশেম, তাজুল ফরাজি।
পুর্বে নিয়োগগুলি যেন এক ভেল্কীবাজি। সুপার নাছির উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানিকছড়ি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মানিকছড়ি, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে অভিযোগপত্র, হাইকোর্টে একটি পিটিশন মামলা করেন। বিভিন্ন অভিযোগে নাছির উদ্দিন উল্লেখ করেন সভাপতি এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী, তার সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে অভিযোগ কারী ও অত্র মানিকছড়ি দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার/ সম্পাদক মোঃ নাছির উদ্দিন খানকে, মারধর,জোর করে স্টাম্পে সইসাক্ষরসহ প্রাণে মারার চেষ্টা করেন। সভাপতি রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে তার সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে প্রাণে মারার চেষ্টাসহ মিথ্যা মামলা মোকদ্ধমায় জড়িয়ে দেন।
সাবেক শিক্ষক মোঃ তাজুল ফরাজি বলেন অত্র মাদ্র্রসার শুরু থেকে আমার পিতার শ্রম-ঘাম ছিল অনেক। আমার পিতার মৃত্যুর পর আমাকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ করে দায়িত্ব দেন। ক্যাশিয়ার হিসাবে কাজ করি। তাজুল ফরাজি অভিযোগ করে বলেন উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন অত্র মাদ্রাসার ফান্ডের জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিলে সেই টাকা সভাপতি মেরে দেন। পরে হিসাবের সময় টাকা নেওয়াটা কথা অস্বীকার করে আমাকে দোষারফ করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেন। আমার পোস্টে মোটা অংকের টাকার বিনিময় অন্যজনকে নিয়োগ করেন। তাজুল ফরাজি আরো বলেন, মাদ্রাসার নামে গচ্ছাবিল গুচ্ছ গ্রামের সরকারী রেশন থেকে দুই কেজি চাল কর্তন করা হয়। সেই রেশন চালের টাকা কোনদিন ক্যাশে আসে না সরাসরি সভাপতি নিজেই তুলে নেন। মাদ্রাসা মার্কেটে থাকা দোকান ঘরের অগ্রিম (সালামী) টাকা সভাপতি পকেটে। সভাপতি দোসর আবু বক্কর (শিক্ষক) দাবীদার মাদ্রাসার একটি দোকান ঘর ব্যবহার করেন তার কোন ভাড়া দিতে হয় না। মাদ্রাসার দোকান ঘর ভাড়ার টাকাটাও সভাপতির পকেটে। এই নিয়ে চলছে মানিকছড়ি দাখিল মাদ্রাসা। মাদ্রাসার সভাপতি কখনো বাবা আবার কখনো ছেলে তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
এই প্রতিষ্ঠানে যারা চাকুরী করেন তার ৫-৬ মাসের বেতন বকেয়া থাকে সব সময়। বেতন আটক করে রাখেন সভাপতি নিজেই কারণ এইভাবে চলতে থাকলে সভাপতির লাভ যেমন মোটা অংকের টাকার বিনিময় শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে। যোগদানের ছয়মাস পর পর নতুন শিক্ষক আসবে বেতন দিতে হয় না।
সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন শিক্ষক নিয়োগ আমার হাতে না, মাদ্রাসা বোর্ড নিয়োগ দিবে। আমি প্রতিষ্ঠাতা সুপার/ সম্পাদক মোঃ নাছির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি আদালতে একটা সিআর ৩৪২/২০২১ মামলা করি। সে মাদ্রাসা থেকে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রাসার নামে এখনো টাকা তুলে। এইসব বিষয় নিয়ে মামলা করেছি। মাদ্রাসার দোকান ঘরের টাকা, রেশনের টাকা, দোকান ঘর ভাড়ার টাকা, শিক্ষক নিয়োগে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎসহ সকল অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন সভাপতি মো: রফিকুল ইসলাম।
Mobarok