আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানারে মেয়র পদ পদে লড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল। তবে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা পেশিশক্তির মহড়া যাতে না হয়। কারণ, এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে সারাদেশে প্রভাব পড়বে। সরকারের সুনাম ক্ষুন্ণ হবে।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক প্রার্থীতা ঘোষণা করতে গিয়ে এসব কথা বলেন সরওয়ার কামাল।
সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের আহবায়ক মমতাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবা বিকেন্দ্রিকরণে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সরওয়ার কামাল বলেন, আমি এবার মেয়র নির্বাচিত হলে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে তা হলো-
১. জাতীয়তা সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ ও অন্যান্য নাগরিক সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ১২টি ওয়ার্ডে সেবাকেন্দ্র স্থাপন
২. চাপিয়ে দিয়ে নয়, আলোচনা সাপেক্ষে টেক্স নির্ধারণ
৩. ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং টেক্স/পৌরকর সহনীয় মাত্রায় রাখা
৪. খাল ও খেলারমাঠ দখলমুক্তকরণ
৫. উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণ
৬. ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ
৭. সবুজ শহর গড়ার লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক বৃক্ষরোপণ
৮. পৌর শিশুপার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র স্থাপন
৯. বর্জ্য ও আবর্জনা অপসারণে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ
১০. রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন ও পশু জবাইয়ের জন্য আধুনিক স্লটার হাউজ নির্মাণ
১১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাবলিক প্লেসসমূহে ‘ফ্রি এন্ড সেইফ’ ওয়াইফাই চালু
১২. শিক্ষিত বেকার যুবকদের ফ্রি ল্যান্সিং প্রশিক্ষণের আওতায় আনা
১৩. ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবা বিকেন্দ্রিকরণ
১৪. পৌরসভার কর্মীদের পে-রোল ও কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার সার্ভিসের আওতায় আনা
১৫. নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং তার সমাধান
১৬. পৌর এলাকার বিভিন্ন স্তরের সুধীজনদের সমন্বয়ে পরামর্শমূলক কমিটি গঠন
১৭. প্রাক্তন মেয়রের অসমাপ্ত কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সমাপ্তকরণ
১৮. টমটম, অটোরিকশা চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পর্যটকমুখি সেবা নিশ্চিত করা
১৯. সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় পুরো পৌর এলাকাকে সিসি ক্যামেরায় আওতায় আনা
২০. দুর্যোগকালে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে 'সেবা টিম' গঠন
২১. পৌরসভার বাজেটে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সহযোগিতার খাতসহ চাকুরির বিশেষ কোটা প্রবর্তন
২২. সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে পৌরসভার দীর্ঘ মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা ইত্যাদি।
২৩. বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসা ভাতা চালু
২৪. নারীবান্ধব পৃথক সেবা সেন্টার স্থাপন
২৫. মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সহায়তা প্রদান
২৬. পৌরসভার উদ্যোগে মহিলা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
মেয়র প্রার্থী সরওয়ার কামাল বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে পৌরবাসী বিপুল ভোটে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছিল। সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রেখে আমি পৌরসভার প্রচুর উন্নয়ন করেছি। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পৌরসভায় যে সমস্ত উন্নয়ত প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তার অধিকাংশই আমার সময়কালের পরিকল্পনা। বিশেষ করে, মিঠাছড়িতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থার স্থান নির্ধারণ আমার মাধ্যমেই শুরু হয়।
নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, জনগণ যাতে সঠিকভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নি। আশা করছি, নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন পৌরবাসীকে উপহার দিবে। এই আশায় ইতোমধ্যে আমি কাজ শুরু করেছি।
আমি পৌরসভার সকল ধর্ম ও মতের মানুষের সাথে কথা বলেছি। তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমাকে নিয়ে আশান্বিত সবস্তরের মানুষ। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কক্সবাজার পৌরবাসী পাশে ছিলাম। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। কক্সবাজার পৌরসভায় দায়িত্বকালীন সেটি প্রমাণ করেছি।
সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের মেয়র প্রার্থী সরওয়ার বলেন, ইউজিপ-২ প্রকল্প, শহরের অলিগলিতে যেসব কাজ দৃশ্যমান সব আমার দ্বারাই হয়েছে। ইউজিপ-৩ প্রকল্প এসএম পাড়া থেকে উপজেলা, বিডিআর ক্যাম্প, আলীর জাঁহাল সংযোগ রাস্তা, সিটি কলেজ থেকে জেলখানা সংযোগ রাস্তা, হোটেল মোটেল জোনের সকল রাস্তা এবং ড্রেন, কলাতলী, আদর্শগ্রাম, লাবনী পয়েন্টের ড্রেনসহ সব রাস্তা আমার সময়কালের। বিমানবন্দর সড়ক, নতুন বাহারছড়া, নাজিরারটেক, বদরমোকাম-টেকপাড়া সংযোগ রাস্তাসহ যে সমস্ত বড় ড্রেন ও সড়ক হয়েছে সব আমার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় কাজগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে।
আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মসজিদ ও কবরস্থানের পাশাপাশি সকল মন্দিরের রাস্তাসহ প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ করেছি। সকল ধর্মের মানুষের পাশে থেকেছি। পৌরপরিষদে অসাধারণ চেইন অব কমাণ্ড ছিল। নিত্যনৈমেত্তিক সেবা নিশ্চিত করতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নিয়মিত অফিস করেছি। নাগরিক সেবা সকলের দ্বারে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। সেবা নিয়ে কাউকে ভোগান্তি পোহাতে হয় নি।
জননেতা সরওয়ার কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজার ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে দেশিবিদেশি পর্যটক আসছে। তাদের সেবা দেওয়ার জন্য কক্সবাজারকে ‘পর্যটকবান্ধব নগরী’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে। জনগণের মতামতকে প্রধান্য দেওয়া হবে। সকল মত ও ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে কমিটি করে একটি আধুনিক পৌরসভা সাজাতে সবার সমর্থন ও পরামর্শ চাই।