ডাক্তারের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়া, সিজার করতে গিয়ে নবজাতকের নাড়ী-ভূড়ি বা অঙ্গ কেটে ফেলা কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বা ভুল ইনজেকশনের কারণে রোগির মৃত্যুর খবরে প্রায় সময় সংবাদের শিরোনাম হয় জেলার হাসপাতালগুলো। অবহেলা কিংবা ভুল চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল। এবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করতে গিয়ে মহিউদ্দিন মাহী নামের এক সাংবাদিক পঙ্গু হতে বসেছেন। মাহীর পরিবারের অভিযোগ, অদক্ষ অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ভুল ভাবে অ্যানেস্থেসিয়া করিয়েছেন। ওই কারণে তার বাম পা ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছে। এতে তিনি ক্রমসই পঙ্গুত্বের দিকে এগুচ্ছেন বলে জানান। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কিছুদিন রেস্ট ও ফিজিওথেরাপির ব্যায়াম করলে সে ঠিক হয়ে যাবে। ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া সাংবাদিক মাহীর বাড়ি শহরের রুমালিয়ার ছড়া এলাকায়। তিনি জেলার বিভিন্ন সংবাদপত্রে একযুগ ধরে কাজ করেছেন। বর্তমানে সিবি২৪.কম নামে একটি অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজের সিও এবং জেলার অন্যতম শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা দৈনিক দৈনন্দিনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। ভুল চিকিৎসার শিকার সাংবাদিক মাহীর স্বজনরা জানান, গত ১৮ জানুয়ারি হঠাৎ প্রচন্ড পেট ব্যাথা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে যান তিনি। বহির্বিভাগে কর্মরত থাকা চিকিৎসক রিদুয়ান তারিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির ৫ দিনের মা়থায় গত ২৩ জানুয়ারি সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনিসুল হোসেনের নেতৃত্বে এপেন্ডিসাইটিসের অপাররেশন করা হয়। স্বজনরা জানান, অপারেশন রুম থেকে বের হওয়ার পর থেকে তিনি তার বাম পা অচেতন অনুভব করতে থাকেন। ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, অজ্ঞানের ইঞ্জেকশনের প্রভাব দুয়েক ঘন্টার মধ্যে কেটে যাবে। কিন্তু অপারেশনের ৬ দিন অতিবাহিত হলেও বাম পা এখনো অবশ অবস্থায় আছে। এদিকে, অবস্থার অবনতি হতে দেখে মাহীর স্বজনদের অশ্রুঝরা অনুরোধে একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়। ৬ সদস্যের বোর্ডে সার্জারি ওয়ার্ডের ডাক্তার আয়ুব আলী, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার আনিসুল হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শাখাওয়াত হোসেন, নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার হাফিজুর রহমান, এনেস্থিসিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গাউসুল আকবর ও ডাক্তার বিধান পাল উপস্থিত ছিলেন। গত ২৮ জানুয়ারি বসা ডাক্তাদের ওই বোর্ড সঠিক কোন ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও কয়েকটি টেস্ট করাতে বলেন। টেস্ট গুলো করার পর রিপোর্ট ডাক্তারদের দিলেও সঠিক কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেননি বলে জানান মাহীর পরিবার। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অপারেশন রুমে মাহীকে অজ্ঞান করার সময় সদর হাসপাতালের এনেস্থিসিয়া বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক উপস্থিত থাকলেও এনজিও থেকে নিয়োগ পাওয়া ডাক্তার সুলভ কি দিয়ে অজ্ঞান করা হয় তাকে। অনভিজ্ঞতার কারণে তিনি ইঞ্জেকশন সঠিক নিয়মে পুশ করতে পারেন নি। যার কারণ এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই ঘটনার পর থেকে অনেকটা আন্তরিকতা দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা, এমনটা জানিয়েছেন মাহীর পরিবার। এব্যাপারে কক্সবাজারের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কক্সিয়ান এক্সপ্রেসের সভাপতি ও দৈনিক দৈনন্দিনের নির্বাহী সম্পাদক ইরফান উল হাসান বলেন, একটি রাষ্ট্রে নাগরিকদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা হলো অন্যতম। একটু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যই মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ জন্য মানুষ ডাক্তার ও হাসপাতালের স্মরণাপন্ন হয়। কিন্তু সাংবাদিক মাহীর মত অধিকাংশ ক্লিনিক-হাসপাতাল সাধারণ মানুষের জন্য কসাইখানা ও মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আর ডাক্তারদের মধ্যে বড় একটি অংশ মানবিকতা ভুলে গিয়ে কসাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। জেলার সচেতন মহলের কয়েকজন বলেন, কয়েকটি বিষয় বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায় রোগির মৃত্যু, সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জীবনকে মৃত ঘোষণা, আইসিইউ ও সিসিইউতে লাইফসাপোর্টের নামে রোগিকে আটকে রেখে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়। তারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। অস্ত্রোপচারের পর পেটের ভিতর ছুরি বা গজ রেখেই সেলাই দেওয়া,অসুস্থ অঙ্গের পরিবর্তে সুস্থ অঙ্গ কেটে ফেলা,দাঁত তোলার নামে শিক্ষানবিস ডাক্তাররা হাত পাকাচ্ছেন,অনেক হাসপাতালে ডাক্তারের পরিবর্তে ওয়ার্ড বয়রাই আবার সর্বেসর্বা। জটিল কঠিন অপারেশন করতেও দ্বিধা করছেন না তারা। আবার সুযোগ সুবিধাহীন সরকারি হাসপাতালে একশ্রেণির ডাক্তার,নার্স, আয়া-কর্মচারীর চরম দুর্ব্যবহারের সামনে রোগিরা থাকছেন বড়ই অসহায়। আর মানবসেবার নাম করে গড়ে উঠা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোরও একই অবস্থা। এদিকে মাহীর ভুল চিকিৎসার খবরে চটেছেন সাংবাদিক মহল। সাংবাদিক নেতারা অতিসত্বর আবারও মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সাংবাদিক মাহীর উন্নত চিকিৎসার দাবী জানান। অন্যথায় সর্বস্তরের গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে দূর্বার আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান তারা।