আজ বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে হবে

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে সিসিএনএফ ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৯ জুন ২০২৩ ০৭:৫৫:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

অধিকারভিত্তিক সংগঠগুলোর নেতৃবৃন্দরা নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সেকেন্ড ট্র্যাক সিভিল সোসাইটি ভিত্তিক কুটনৈতিক তৎপরতা চালানোর উপর গুরুত্বারোপ করেছেন নাগরিক সমাজ। তারা আন্তর্জাাতক সম্প্রদায় ও উন্নত দেশগুলোকে মায়ানমার সরকারের সাথে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন। সেইসাথে সন্ত্রাস মোকাবেলায় কঠিন সিদ্ধান্ত আরোপের পরিবর্তে রোহিঙ্গা ও হোস্ট কমিউনিটির সাথে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা উপর গুরুত্বারোপ করেন। 

২০ জুন বিশ্ব শরনার্থী দিবসকে ঘিরে কক্সবাজারভিত্তিক এনজিও নেটওয়ার্ক- সিসিএনএফ ও কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত “রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের মানবিক অবস্থান” শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

নারীপক্ষের শিরীন হকের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশন ও সিসিএনএফ-এর রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিসিএনএফ ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের জাহাঙ্গীর আলম। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইনহুরাড ইন্টারন্যাশনাল-নেপাল ও এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি নেটওয়ার্কের সাবেক সভাপতি গোপাল কে. সিয়াকোটি, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফ খান, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সম্পাদক মোঃ মুজিবুল ইসলাম,এডাবের পরিচালক জসিম উদ্দীন, ইপসা এর প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দীন এবং এ্যাকশন এইডের আব্দুল আলিম।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রোহিঙ্গা মানবিক কর্মকান্ড বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের অংগ্রহনের উপর জোর দেন। 

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা মাঠ কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় সংগঠনগুলোকে নেতৃত্বদানের কাজটি দিতে হবে আর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো থাকবে মনিটরিং, তহবিল সংগ্রহ ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের কাজে নিয়োজিত। 

মোঃ মুজিবুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোন বিকল্প নাই। কিন্তু যতক্ষণ না এটা হচ্ছে ততক্ষণ আমরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে রোহিঙ্গাদের মানবিক মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধ পরিকর।

শিরীন হক বলেন, ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরে সন্ত্রাস রুখে দিতে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা বিশেষ সুফল বয়ে আনবে না বরং নারী, পুরুষ ও যুবক, যুবতীদের অংশগ্রহণে ক্যাম্প ও হোস্ট কমিউনিটির সাথে আলোচনা করে এর প্রতিরোধ বিষয়ে তাৎপর্যপূণ সমাধান আশা করা যেতে পারে। 

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে আগ্রহী ও সম্পৃক্ত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের প্রতি আহবান জানান।

গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে কক্সবাজারে এক মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের অনেকগুলো চাহিদা মেটানো সম্ভব। এক্ষেত্রে তিনি স্থানীয় পর্যায়ে সুটকি মাছ, লবন ও শাহজাদপুরের লুঙ্গির কথা উল্লেখ করেন। 

তিনি আরো বলেন, সরকারের উচিৎ রিফিউদের জন্য প্রণিত জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষর করা যা তাদের জন্য অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থানকে যৌক্তিকতা প্রদান করবে।

আসিফ মুনির বলেন, আমাদের অভিজ্ঞ পুলিশ ও মিলিটারি বাহিনি আছে যারা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে রিফিউজি ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাফল্যের সাথে কাজ করেছে। কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় তাদের অংশগ্রহণ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। 

তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও চাপ প্রয়োগ এখন আর তেমন কাজ করে না তাই তিনি মায়ানমার সরকারের সাথে বাণিজ্যিক কুটনৈতিক তৎপড়তা জোরদার করার কথা বলেন। সেই সাথে সরকারের উচিৎ রোহিঙ্গাদের জন্য পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা যেখানে তারা হোস্ট কমিউনিটির জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রস্তুতের মতো কাজে যুক্ত হবে।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক সংগঠনগুলোর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আশিয়ান/দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিক সংগঠনগুলোর সাথে আরো যোগাযোগ বৃদ্ধি করা উচিত, সেইসাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরাম যেমন হিউম্যান রাইটস্ কাউন্সিল ও রোহিঙ্গা ডায়াসফোরা/প্রবাসীদের সাথেও যোগাযোগ বাড়ানো উচিত।