সুভাষ দাশ, ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগ হলেও কোন প্রকারের পদোন্নতি ছাড়াই গত সাত বছর ধরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে চাকুরীরত আছেন প্রধান সহকারী হিসাবে। বিগত ফ্যাসিস্ট আ'লীগ সরকারের দলীয় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের দূর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও আস্তাবাজন হওয়ার সুবাদে সুভাষ দাশ বান্দরবান স্বাস্থ্য বিভাগে মাফিয়া বনে গেছেন। বান্দরবান স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মচারী নিয়োগ,বদলী বানিজ্য,ওএসডি,বাৎসরিক সরকারী ঔষধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম (এমএসআর)ক্রয় টেন্ডার,নার্সিং ভবন ও নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মানের ঠিকাদারী ইত্যাদি সব কিছুই নিয়ন্ত্রক এই সুভাষ দাস। যার ফলে বান্দরবান স্বাস্থ্য বিভাগের মাফিয়া হিসাবে তিনি সবার কাছে পরিচিত। তিনি বিগত সাত বছরে এসব খাত থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা উপার্জন করে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গড়েছেন বান্দরবান ও ভারতে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দৈনিক সাঙ্গুর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বান্দরবান পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ড নোয়া পাড়ার বাসিন্দা অর্পন দাসের পুত্র সুভাষ দাস। তিনি ২০ অক্টোবর ২০০৪ সালে রোয়াংছড়ি স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ক্যাশিয়ার পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা পরিষদের দূর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার হাত ধরে মোটা অংকের টাকার বিনীময়ে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ক্যাশিয়ার পদে যোগদান করেন। কিছু দিন যেতে না যেতেই চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বিদেশ ভ্রমনে গেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়ীত্ব পালন করেন আরেক দুর্নীতিবাজ জেলা পরিষের সদস্য ও আ'লীগ নেতা ক্যাসাপ্রু। সুভাষ দাস মোটা অংকের টাকার বিনীময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাসাপ্রু কে ম্যানেজ করে নিয়ম বর্হিভুত ভাবে কোন পদোন্নতি ছাড়াই সদর হাসপাতালে প্রধান সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। সেই থেকে তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি চাকরীতে নিয়োজিত থেকেও রফিক নামে এক ব্যক্তির নামে হাসপাতালের বাৎসরিক সরকারী ঔষধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম ক্রয়ের টেন্ডার(এমএসআর) বছরে কমপক্ষে ২ কোটি টাকা ইনকাম করেছে। সদর হাসপাতালের পাশে নির্মিত নার্সিং ভবন ও নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মানকারী প্রতিষ্টানের ঠিকাদারকে ভয় ভীতি দেখিয়ে কংকর,ইট,বালুসহ বিভিন্ন মালামাল সাপ্লাইয়ের কাজ নিয়ে কয়েক কোটি টাকা ইনকাম করেছেন। প্রতি মাসে
হাসপাতালের জেনারেটরের তেলের খরছের ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা আত্নসাৎ করেছে। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে নিজস্ব জীপ গাড়ি দিয়ে হোটেল থেকে হাসপাতালো ডাক্তার আনা নেয়া খাতে ভাড়া দেখিয়ে ভুয়া বিল করে ৩৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। করোকালীন সময়ে সদর হাসপাতালের অক্সিজেন প্লেন ও আইসিইউ সেটাফ এর জন্য দশ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। কিন্তু অল্প টাকায় নিম্নমানের অক্সিজেন প্ল্যান স্থাপন করা হলেও আইসিইউ সেটাফ স্থাপন না করে প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,সুভাষ দাস বান্দরবান পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের নতুন পাড়ায় রেষ্ট হাউসের জায়গ দখল করে প্রায় ৩কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর সভার অনুমোদন বিহীন আলিশান ৪তলা ভবন তৈরী করেন। বান্দরবান সদরে অবস্থিত হোটেল হিলভিউ সংলগ্ন কলাপাতা রেষ্টুরেন্টের মালিকানা ও ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল ও মোটরসাইকেলের পার্টস এর ব্যবসা রয়েছে তার। পিতার নামে নিয়েছেন ইমানুয়েল হাসপাতালের মালিকানার অংশ। বান্দরবানের বিভিন্ন জায়গায় ক্রয় করেছেন মুল্যবান জমি। বান্দরবান সদর হাসপাতালের একাধিক স্টাফ জানিয়েছে, ক্যাশিয়ার সুভাষ দাসের বড় ছেলে গত ৭/৮ বছর ধরে ভারতে পড়া লেখা করছে। তিনি বিভিন্ন অযুহাতে প্রতি বছর ব্যবসায়ীক কাজে ৫/৬ বার ভারতে আসা যাওয়া করে থাকে। এছাড়াও ভারতের সাথে ব্যবসা ছাড়াও ভারতের কলকাতায় রয়েছে বিলাস বহুল বাড়ী। সুভাষের আচার আচরনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা "র" এর সাথে তার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে তাদের ধারনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক বান্দরবান স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান,সুভাষ দাস বিভিন্ন ভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে সিভিল সার্জনকে নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে বান্দরবান স্বাস্থ্য বিভাগে রাম রাজত্ব কায়েম করে। তার এসব দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে কোন ষ্টাফ প্রতিবাদ করলে মুহুর্তের মধ্যে বদলী করে দেয়া হতো রুমা বা থানছি হাসপাতালে। এব্যাপারে বান্দরবান সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী সুভাষ দাস তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,শত কোটি টাকা দূর্নীতির পাহাড় মাথায় নিয়ে পলাতক বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার সাথে কখনো আমার ভাল সম্পর্ক ছিলনা।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নব নিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই বলেন,জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গড়া নতুন বাংলাদেশে বিন্দু পরিমান অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করা হবেনা। বর্তমান জেলা পরিষদ যে কোন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জরো টলারেন্স। বান্দরবান সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী সুভাষ দাস এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।