আজ শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফটিকছড়িতে ডাবল মার্ডার, নেপথ্যে পরকিয়া!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফটিকছড়ি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১৪:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগরের তেলপারই গ্রামের ছমদ বাড়ীর নুরুল ইসলামের পুত্র রেজাউল করিমের সাথে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের মুফতি বাড়ীর মোঃ সোলায়মানের কন্যা নিগার সুলতানা হ্যাপীর সাথে। ২০০৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মিলেমিশে সংসার করে আসছিল তারা। তাদের পরিবারে দুই ছেলে সন্তানসহ এক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। হ্যাপীর স্বামী রেজাউল করিমের ৫ ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাইয়ের মৃত্যু হলেও অপর ৪ ভাই মধ্য প্রাচ্যের আরব আমিরাত প্রবাসী। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে হ্যাপী গ্রামের বাড়ীতে সুখে বসবাস করে আসছিল।

 

গত ৩ আগষ্ট(মঙ্গলবার)  বিকালে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এই পরিবারে ঘটে মারামারির ঘটনা। এতে আলমগীর ও জাহাঙ্গীর নামের দুই সহোদর নিহত হয়। আহত হয় রেজাউল করিমসহ ৭ জন।

 

এ ঘটনায় নেপথ্যে কারণ জানতে অনুসন্ধানে গেলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ৫ বছর আগে রেজাউল করিম গ্রামের বাড়ীতে দালান নির্মান করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে তদারকি করেন রেজাউলের স্ত্রী হ্যাপী। এসময় স্থানীয় ইব্রাহীম নামের এক নির্মাণ শ্রমিকের সাতে গভীর যোগাযোগ থেকে পরকিয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের কথা স্বামী রেজাউল করিম জানতে পারলে পরিবারে নেমে আসে অশান্তি। এতে দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চরম কলহ চলতে থাকে।

 

অতঃপর গত দু'বছর আগে পরকিয়ার অভিযোগে স্বামী রেজাউল করিম  স্ত্রী হ্যাপীকে তালাক দেয়। তালাক পরবর্তী স্ত্রী হ্যাপীর কাবিনের টাকা ও তার প্রাপ্য বুঝিয়ে না দেয়ায় স্বামীর ঘর ছেড়ে যায়নি সে। এতে শুরু হয় চরম বিপত্তি আর শালিশ-বিচার। একাধিক সামাজিক বিচার স্বামী রেজাউল করিম মেনে না নিলে তার ৪ ভাইসহ পুরো পরিবারকে এক ঘরে করে দেয় সমাজ। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদের বিচারও তারা মানেনি। এ ঘটনায় তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম রেজাউল করিমদের মারধর করার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে তারা। সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান আব্দুল হালিমের সাথেও প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ তুলেন।

 

এদিকে রেজাউল করিমের পরিবার সমাজচ্যুত হয়ে ভাড়া বাসায় চলে গেলেও তার স্ত্রী হ্যাপী সন্তানদের নিয়ে নিজ ঘরেই সংসার চালাচ্ছিল। এ নিয়ে পারার প্রতিবেশীদের সাথে রেজাউল করিমদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। গত মঙ্গলবার(৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে কয়েকটি ধারালো কিরিচ নিয়ে নিজেদের বসতঘরে ঢুকে। সামনে পেয়ে স্বামী রেজাউল করিম প্রথমেই তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী হ্যাপীকে মাথায় আঘাত করে। এ সময় স্ত্রী দৌঁড়ে বেরিয়ে গিয়ে প্রতিবেশীদের খবর দেয়। তখন সমাজপতি বাবুলসহ অন্যরা এগিয়ে এলে রেজাউল করিমদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এ সময় প্রতিবেশী বোরহান উদ্দিন (৩৫), আফাজ উদ্দিন (৩০), শাহাবুদ্দিন (৫৫), বাচ্চু (৪০), স্ত্রী নিগার সুলতানা হ্যাপি (৩৮), মেয়ে নাজিফা আকতার রিয়া(১৮) আহত হলে তারা উল্টো কোপাতে শুরু করে রেজাউল করিমদের। এ সময় রেজাউল করিম আহত হয়ে তার ছোট ভাই রাসেলসহ ঘরে ঢুকে প্রাণে বেঁচে গেলেও অপর ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম (৫০) ও মোহাম্মদ আলমগীর (৪৫) ঘটনাস্থলে নিহত হয়। 

 

একইদিন, রাত ১০টায় ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেজবাহ উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত ওসি আবু জাফর মোঃ সালেহ তুহিনসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। গত বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে নিহত দুই ভাইয়ের লাশ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এদিন বাদ আসর তাদের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। আহতদের ৪ জন চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে জানা গেছে। থানায় নিহতদের ছোট ভাই রাসেল বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এ ডাবল মার্ডার ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা যায়।

 

গত বুধবার বিকেলে এ ঘটনায় ফটিকছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত ব্যক্তিদের ভাই মুহাম্মদ রাসেল। মামলায় আসামিদের মধ্যে নিহত ব্যক্তিদের বড় ভাই রেজাউল করিমের স্ত্রী নিগার সুলতানা হ্যাপীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে ১০০-১৫০ জনকে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফটিকছড়ি থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) আবু জাফর মোঃ সালেহ তুহিন বলেন, এঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। নিহতদের ভাই রাসেল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ ঘটনায় মামলার আসামী নিগার সুলতানাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।