চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সব কনটেইনার পণ্যভর্তি ছিল। ফলে আগুনে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা ও আমদানির বহু পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য পুড়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা দাঁড়ায় প্রায় ৯০০ কোটি।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী রোববার (৫ জুন) দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বিকডা সচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপোতে দুর্ঘটনার সময়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি কনটেইনার ছিল। এরমধ্যে অন্তত এক হাজার ৩০০ কনটেইনারে আমদানি ও রপ্তানিপণ্য ছিল। পণ্যভর্তি এসব কনটেইনারের অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে আমদানি করা বহু পণ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশি পুড়েছে রপ্তানির জন্য রাখা পণ্য। রপ্তানির জন্য কনটেইনার ভর্তি করে রাখা অনেক পোশাক ছিল। সেগুলো রপ্তানির নির্ধারিত সময় (লিড টাইম) ছিল। কিন্তু পোশাক পুড়ে যাওয়ায় রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
এদিকে, বিএম কনটেইনারে আগুনের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া কনটেইনারে রপ্তানিপণ্য বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিএমের ডিপোতে বেশি ক্ষতি হয়েছে রপ্তানিপণ্যের। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানিপণ্য পুড়েছে। বাংলাদেশে টাকায় তা প্রায় ৯০০ কোটি।’
রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ঠিক কতটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য পুড়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। এ বিষয়ে তথ্য জানতে বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সব তথ্য পাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে।’
শনিবার (৪ জুন) রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। ডিপোর কনটেইনারে কেমিক্যাল জাতীয় দাহ্য পদার্থ থাকায় বিস্ফোরণ শুরু হয়। ফলে দ্রুত পুরো ডিপোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট পৌঁছে। পরে আরও আটটি ইউনিট সেখানে যোগ দেয়। তবে বিস্ফোরণের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পোহাতে হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।
এদিকে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন কর্মীও রয়েছেন। আগুনে আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক। দগ্ধদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেখানে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণ হচ্ছে। জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। নিরাপদ দূরত্বে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনীর একটি টিমও।