বর্তমান বিশ্বে 'পর্যটন' একটি বড় শিল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পর্যটনকে লাভজনক শিল্পে দাঁড় করাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। সমগ্র বিশ্বে এখন বছরে ১০০ কোটিরও বেশি পর্যটক নিজ দেশ থেকে আরেক দেশে যান ভ্রমণের নেশায়; নতুন কিছু দেখার আশায়, শেখার আশায়। ভ্রমণের পেছনে দৈনিক খরচ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। পর্যটন হচ্ছে বেসিক হিউম্যান ট্রেড। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে দক্ষ জনশক্তি দিয়ে সেবা দিতে পারলে পর্যটনকে একটি লাভজনক শিল্পে রূপান্তর করা সম্ভব। এখানে প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হবে।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর আয়োজনে 'পর্যটন উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তিঃ প্রেক্ষিত কক্সবাজার' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর সহযোগিতায় শহরের আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকারি বেসরকারি সবাইকে সমন্বয় করে আমরা উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কক্সবাজারকে সাজাচ্ছি। সে জন্য মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। এই কাজে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সবার সহযোগিতা চাই।
কউক চেয়ারম্যান বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে পর্যটকদের ঠকানো হচ্ছে। বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সম্পর্কে আমরা লিখেছি। গত ২০/৩০ বছর ধরে এই কমিটি চলমান। সেই কমিটি সম্পর্কে অনেক আপত্তি আছে। টাকা জমা নিয়েও রয়েছে অভিযোগ।
তিনি বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দেখলাম, বীচের দোকান মালিকদের অনেকে গরীব লোক না। একজনের নামে ২০০ পর্যন্ত টমটমের লাইসেন্স আছে। এমন হবে কেন? যতক্ষণ নিজের পরিবর্তন হবে না ততক্ষণ সমাজ ও দেশের পরিবর্তন আসবে না।
চলমান সড়ক উন্নয়ন কাজ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন কউক চেয়ারম্যান। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, শহরের রাস্তা নিয়ে টেনশনে আছি। কন্ট্রাক্টররা ঠিক মতো কাজ করে না। নিজে গিয়েও দেখি। তদারকি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী এপ্রিল নাগাদ কাজ শেষ হবে আশা করছি।
নিজেকে দক্ষ করার সাথে পরিবারের সদস্যদের মানবিক ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার আহবান জানান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। সেই সঙ্গে উন্নয়ন কাজ নিয়ে 'ফেসবুকে উল্টাপাল্টা' না লিখার অনুরোধ করেন।
আইএলও-এর জেলা সমন্বয়ক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে কীনোট উপস্থাপন করেন কক্সবাজার সিটি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মইনুল হাসান পলাশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা অভাবনীয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের প্রায় ১ দশমিক ৫ কোটির উপরে সারাদেশে ভ্রমণ করে। ৪০ লাখের বেশি মানুষ এই শিল্পে কর্মরত। বর্তমানে পৃথিবীতে ১০ জনের মধ্যে একজন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটন সম্পর্কিত পেশার সঙ্গে জড়িত।
এ খাতে সফল হতে হলে দক্ষ পর্যটনকর্মী তৈরি করতে হবে।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন টুয়াকের সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম রেজা।
তিনি বলেন, কুদুম গুহা, সোনাদিয়া, সোনাইছড়ি এই তিনটি স্পষ্টকে কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম হিসেবে গড়ে তুলার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেয়েছি। এই কাজে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি।
টুয়াকের সাধারণ সম্পাদক আজমল হুদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সহসভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান মিল্কি, ট্যুর অপারেটর তৈয়ব উল্লাহ, হুমায়ুন কবির আজাদ, স্বপন শর্মা, মমতাজ মিয়া, খোকন পাটোয়ারিসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন। পর্যটন বিকাশে টুয়াকের ভাবনা বিষয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক আজমল হুদা।