আজ সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ই পৌষ ১৪৩১

জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহায়তা নিয়ে দুবাই ফেরত অসুস্থ প্রবাসীর বাড়িতে গেলেন (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস

নুরুল ইসলাম সবুজ, সাতকানিয়া : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৭ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৮:০০ পূর্বাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম

সাতকানিয়ায় অসহায় দুবাই ফেরত প্রবাসীর সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল (শনিবার) দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস চরতি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডস্থ ওই প্রবাসীর নিজ বাড়ি গিয়ে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। শুধু তাই নয়,প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষনসহ সকল ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন (ইউএনও)   

জানা যায়,মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন উপজেলার চরতি ইউনিয়নের ৫০বছর বয়সী বাসিন্দা নুরুল আমিন। পুলিশের সহায়তায় হুইল চেয়ারে করে বিমান থেকে নেমে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অফিসে গিয়ে পুলিশের সহায়তায় বাড়িতে স্ত্রীকে ফোন দেন নুরুল আমিন। তবে,স্ত্রী অপারগতা জানায়। পরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম কর্মকর্তারা তাকে রিসিভ করে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার ঢাকার আশকোনায় রাখা হয়। বিষয়টি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। পরে চট্টগ্রাম ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নুরুল ইসলামের উদ্যোগে চরতি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউ.পি সদস্য নুরুল আমিন ও ফিল্ড অর্গানাইজার নোবেল দাসের সহায়তায় পরিবারকে রাজি করিয়ে দুবাই প্রবাসীর স্ত্রী জোসনা আক্তার বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় গিয়ে প্রবাসী নুরুল আমিনকে শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকালে নিজ বাড়ি নিয়ে আসে। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গতকাল (শনিবার) দুবাই ফেরত প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা ও এক মাসের খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেন।  (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, মানবিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপাতত ১০০ কেজি চাউল, নগদ ২০হাজার টাকা ও এক মাসের মুদি দোকানের বাজার দেওয়া হয়েছে। ইউএনও পরবর্তীতে ওই প্রবাসী ও তার সন্তানদের লেখাপড়া,চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন।   

এ সময় উপস্থিত ছিলেন,ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম চট্টগ্রামের ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর নুরুল ইসলাম,স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিনসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।  ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, আপাতত দুবাই ফেরত প্রবাসী নুরুল আমিনের চিকিৎসার সার্বিক ব্যয় আমরা (ব্র্যাক) করব। ওনি সুস্থ হওয়ার পর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলাপ করে ওনি যাতে স্বাবলম্বি হয়ে পরিবারের অভাব গুছাতে পারে সেজন্য ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম সকল ধরণের সহায়তা প্রদান করবে।প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী জোসনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী ৮মার্চ দেশে আসবে এমন খবর তার এক রুমমেটের মাধ্যমে জানতে পারি। এর পর থেকে ওনার (স্বামীর) ফোন পায়নি। ১২ মার্চ দেশে এসে ফোন দিলে আমি পুলিশ সদস্যদের তাকে গাড়িতে তুলে দিতে বলি। আমি চট্টগ্রাম শহর ও কেরানীহাট থেকে তাকে রিসিভ করার কথা জানায়। তিনি আরও বলেন,এখানে আমি স্বামীকে আনতে অস্বীকৃতি এবং অপারগতা দেখায়নি। আমার সন্তানরা ছোট হওয়ায় এবং আমি ঢাকা না চেনায় এ কথা বলেছি। আমার এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। ওনি না থাকলে আমার সংসারের অর্থের যোগান কে দিবে? এখানে আমার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।   

স্থানীয়  চরতি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল আমিন ও প্রবাসীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ঋণ করে অবৈধ পথে দুবাই যান নুরুল আমিন। অবৈধ হওয়ায় সেখানে কোন কাজ না পেয়ে পান বিক্রি শুরু করেন। তবে ওই পান বিক্রির টাকায় সংসারের ভরণপোষন মেটানো ও ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। গত সপ্তাহে নুরুল আমিন দুবাই পুলিশের হাতে ধরা পরে এক সপ্তাহ জেল খাটেন। জেলেই তিনি হৃদরোগ ও প্যারালাইসিস (পক্ষাঘাত) রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরেন।