আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জমির বিরোধ নিয়ে মিরসরাইয়ে বৃদ্ধকে হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই: | প্রকাশের সময় : সোমবার ৮ অগাস্ট ২০২২ ০২:৪০:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মিরসরাইয়ে সুভাষ চৌধুরী (৬৫) নামে এক বৃদ্ধকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার সময় অজ্ঞান অবস্থায় সুভাষ চৌধুরীকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে রোববার উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামের মহাজন বাড়ির গেইট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সুভাষ চৌধুরী ও তার চাচাত ভাই বরুণ চৌধুরীর মাঝে ঝগড়া হয়। সুভাষ চৌধুরী ওই বাড়ির অণিল কুমার চৌধুরীর ছেলে। 

নিহত সুভাষ চৌধুরীর ছোট ছেলে সৈকত চৌধুরী বলেন, আমার বাবার চাচাত ভাই বরুণ চৌধুরীর সাথে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। গতকাল রোববার সকালে বাড়ির প্রবেশ মুখে একটি গেইট দেওয়ার চেষ্টা করে বরুণ চৌধুরী। বাড়ির পরিমাপ ছাড়া তাকে গেইট নির্মাণ বন্ধ রাখতে বলে আমার বাবা। পরবর্তীতে বরুণ চৌধুরী ও তার ছেলেরা লাঠি, খন্তা নিয়ে বাবাকে মারতে আসে। এক পর্যায়ে তাকে মেরে ফেলারও হুমকী দেয়। রোববার দিবাগত রাত ১টার সময় বাবা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হন। ওই সময় বাবার সাথে আমার কথা হয়। ঘুম চলে আসাতে আমি শুয়ে পড়ি। ভেবেছি বাবাও ঘরে এসে শুয়ে পড়বেন। সোমবার সকালে আমাদের বাড়ির অন্য লোকজন এসে বলে বাবা ঘরের কোণে উঠানে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। সেখান থেকে বাবাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বাবার শারিরীক অবস্থা অবনতি হলে সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নেওয়া হয়। সেখানে আমার বাবা মারা যায়। বাবার হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাবার মৃত্যুর জন্য বরুণ চৌধুরী ও তার ছেলেদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেন। পিতার মৃত্যুর বিচার দাবীতে থানায় মামলা করবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে মিঠানালা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন, রোববার জমি নিয়ে সুভাষ চৌধুরী ও বরুণ চৌধুরীর মাঝে ঝামেলা হয়। সোমবার সকালে চমেক হাসপাতালে সুভাষ চৌধুরী মারা গেছেন বলে শুনেছি। প্রতিপক্ষের হামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, সুভাষ চৌধুরী ও তার চাচাত ভাই বরুণ চৌধুরীর সাথে বাড়ির গেইট নির্মাণ ও জমি নিয়ে বিরোধ ছিলো। রোববার সকালে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। সোমবার ভোরে নিজ ঘরের সামনে উঠানে উপুড় হয়ে পড়েছিলো সুভাষ চৌধুরী। এসময় তার মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিল। বিষয়টি দেখে বাড়ির কয়েকজন মহিলা সুভাষ চৌধুরীর ছেলেদের বিষয়টি বললে তারা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে সুভাষ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে রোববার রাতে কিংবা সোমবার ভোরে দু’পক্ষের মাঝে আর কোন ঝগড়া হয়নি। সুরতাহালে সুভাষ চৌধুরীর শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। 

এদিকে সুভাষ চৌধুরীকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা হলেও তার নামে এখনো কোন গেজেট হয়নি। মিঠানালা ইউনিয়নে সুভাষ চৌধুরী নামে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমদ। তার ছোট ছেলে সৈকত চৌধুরী বলেন, আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ শেষে তিনি অস্ত্রও জমা দিয়েছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির জন্য কাগজপত্র জমা দিলেও যাচাই বাছাইয়ে তা বাদ দেওয়া হয়। আমরা পুনরায় বাবার কাগজ জমা দেবো।