কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম এবং সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
সোমবার (১৩ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাস জুড়ে মিছিল আর স্লোগানে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দিতেও দেখা যায়।
মিছিল ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মনির উদ্দিন, হাসান সাইমুন, রাকিবুল ইসলাম সাইক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির উদ্দিন রিহান, মহিউদ্দিন বাপ্পি, মাসুদ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান সুজন, অর্ণব দেব, দপ্তর সম্পাদক জামশেদ উদ্দীন, অর্থ সম্পাদক কাজী আব্দুল মালেক রুমি, উপ সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কায়েস মাহমুদ, সহ সম্পাদক মোস্তফা আসিফ, সাইফুর রহমান হানিফ, গ্রন্থণা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা আমান, উপ-প্রচার সম্পাদক মো: ফোরকান, উপ মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক রুবেল হোসেন মুন্না, ছাত্রলীগ নেতা ইয়াছির আরাফাত রিকু, উপ সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ইমাম হোসেন, উপ সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন সাজিদ প্রমুখ।
এ সময় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অর্নব দেব বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। বর্তমানে অনার্সে ভর্তি চলছে। প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী থেকে একটি খাম বিক্রি বাবদ ১০০ টাকা করে নিচ্ছে। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড নিতে হলে প্রত্যেকটি থেকে ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন সভাপতি-সম্পাদক। অথচ শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যেন কোনো চাঁদাবাজি না করা হয়। এই সব নিয়ে কয়েকদিন ধরেই আমরা প্রতিবাদ করে আসছি। প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে। সেখানে আমরা উপস্থিত হতেই আমাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে এমন চাঁদাবাজি তারা দীর্ঘদিন ধরেই করছেন। এমন ঘটনার প্রতিবাদে চকবাজার থানা ও কোর্টে আমরা মামলাও করেছি। ক্যাস্পাসে একটা ভীতিকর পরিবেশ ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে বন্ধ হলে অস্ত্র মওজুদ করছে।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজির পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্য, টেম্পো স্টেশন ও টং দোকান থেকেও প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণে চাঁদাবাজি করছে। এমনি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও কোন ছাড় দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, এসব চাঁদাবাজি করে কলেজ সভাপতি মাহাদুল করিম সাড়ে ৩ কোটি টাকায় একটি বিশাল বাড়ি বানিয়েছেন। তাদের দুই জন এতটাই বেপরোয়া যে, তাদের কাছে সবাই অসহায়। তারা একটি কলেজে কীভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্য ৩ টাকা দামের খাম ১০০ টাকা আদায় করছে! তবে আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। এই কারণে আমাদের সঙ্গে বার বার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে তারা দুই হলে অবৈধভাবে প্রবেশ করে অস্ত্র মওজুদ করছে। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেছে।
কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সাইমুন বলেন, ২০১৫ সালের আগের জামাত শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে জিম্মি দশায় রেখেছিল, কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির পরে মাহমুদ-সবুজ সেই একই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে কর্মচারী, অফিস সহকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করে রেখেছিল।
খাম বাণিজ্য থেকে শুরু করে এডমিট কার্ড, রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের জন্যে চাঁদা দিতে বাধ্য করতো মাহমুদ-সবুজ। তাদের এই দুর্নীতি অনিয়মের মুখে একত্রিত হয়ে রুখে দাঁড়িয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে তাদেরকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে চট্টগ্রাম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনির উদ্দীন রিহান বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ কমিটি গঠনের পর থেকে সভাপতি-সম্পাদক স্বেচ্ছাসারিতার মাধ্যমে একটি জিম্মিদশার রাজনীতিতে পরিণত করেছিলো আজকে ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ জানান, এটা মূলত রাজনৈতিক তৃতীয় পক্ষের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। অর্থাৎ আমাদের যারা নেতা আছে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফসল। তারা আমাদেরকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য এটা তাদের অপকৌশল। এসব অভিযোগ ভুয়া। সংগঠনকে যেটা জানানোর সেটা আমি আজ থেকে একমাস আগে জানিয়েছি।