নগরের ফিসারি ঘাটে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা আছে- ২০ মে হতে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্রি হচ্ছে জাটকা।
বাংলাদেশের মৎস্য আইন অনুযায়ী জাটকা নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ। আগে জাটকার আকার ছিল ৯ ইঞ্চি। সম্প্রতি সে আকার এক ইঞ্চি বাড়ানো হয়েছে। ছোট ইলিশের মাপ যদি ১০ ইঞ্চির নিচে হয়, তাহলে সে জাটকা ধরার জন্য দণ্ডিত হবেন জেলে। বিক্রয়-বিপণন ও সংরক্ষণের জন্য সাজা পাবেন আড়তদার এবং ব্যবসায়ী।
সোমবার (১৮ জুলাই) ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত নগরের ফিসারি ঘাটে পুরোদমে বিক্রি হয় জাটকা। মাছগুলো আসে আনোয়ারা, বাঁশখালী ও মহেশখালী থেকে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাছ বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জাটকা। প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের নিয়মিত অভিযান এবং তদারকির পরও জাটকা ধরা ও বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাটকা বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে অনেক অসাধু জেলে জাটকা শিকার করছেন। যে কারণে আগামী দিনগুলোতে স্থানীয় নদ- নদীগুলো ইলিশশূন্য হতে পারে। এতে স্থানীয় জেলেদের যেমন ক্ষতি হবে তেমনি করে দেশ হারাবে ইলিশ সম্পদ।
নগরে প্রধান মাছ বাজার ফিসারি ঘাটে জাটকা বিক্রি করতে দেখা গেছে অনেক মাছ ব্যবসায়ীকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, আনোয়ারা, গহিরা, বাঁশখালী, মহেশখালী থেকে এই বাজারে জাটকা আসে। অনেকেই জাটকা বিক্রি করছেন, আমিও করি। অভিযানের খবর পেলে লুকিয়ে রেখে গোপনে বিক্রি করি। তবে অনেকদিন হয়েছে, বাজারে কোনো অভিযান চালাতে দেখিনি।
নগরের স্থায়ী-অস্থায়ী বাজারগুলোতে প্রতিকেজি জাটকা ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত ১০ ইঞ্চি আকারের একটি ইলিশের বয়স ধারণা করা হয় ৮-৯ মাস। একটি ইলিশ পূর্ণবয়স্ক হওয়ার জন্য এক বছরের বেশি সময় লাগে। জন্মের পর থেকে জাটকা এক বছর বেঁচে থাকতে পারলে কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি বা এক ফুট আকৃতির চেয়ে বড় ইলিশে পরিণত হবে। তখন এরা প্রজনন প্রক্রিয়া শুরু করে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলি বলেন, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সাগরে থাকি। যাতে কেউ জাটকা ইলিশ শিকার করতে না পারে। এরপরও কিছু অসাধু জেলে মাছ শিকার করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষের দিকে, তাই সবাই সাগরে যাচ্ছে। তাদের আটকানো অনেকাংশে সম্ভব হয়ে উঠে না। এরপরও আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সাগর ও নদীতে জাটকা ধরা এবং বিক্রি বন্ধ করতে সরকার নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকল প্রকার কারেন্ট জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অসাধু জাটকা ব্যবসায়ী এবং শিকারি জেলেদের শনাক্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আনোয়ারা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে রোববার (১৭ জুলাই) ১ হাজার ৭০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়।