চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এক বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে মুক্তিসংগ্রামের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।
রোববার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবসের সকালে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করেন চট্টগ্রামবাসী। সময় পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
প্রথমে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। পরে একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার আমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এরপর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, মহানগর বিএনপি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সিপিবি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে বিউগলের করুণ সুর ও সশস্ত্র অভিবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা।
রোববার সকাল ৮টায় আনসার-ভিডিপি, নগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বয়েজ স্কাউট, গার্লস গাইড ও বিএনসিসির সদস্যরা কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসাক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান।
কুচকাওয়াজ সালাম গ্রহণ শেষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রাহমান শিশু কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমাদের পূর্ব পুরুষগণ অবর্ণনীয় কষ্ট ও ত্যাগ শিকার করে তোমাদেরকে স্বাধীন মাতৃভূমি উপহার দিয়ে গেছেন। তোমরা তাদের প্রতি আজীবন শ্রদ্ধাশীল ও কৃতজ্ঞ থাকবে। তোমরা বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতি এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পাঠ ও স্বাধীনতার দিবসের চেতনাকে লালন করে চলবে। কারণ শুধু তোমাদের জন্যই আগামীর প্রযুক্তি নির্ভর, উন্নত ও সুন্দর পৃথিবী। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস. এম. শফিউল্লা।
এছাড়াও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সরোয়ার কামাল উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, নগরীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ স্কাউটস, রোভার স্কাউটস, গার্লস গাইড এবং শিশু কিশোর সংগঠন কর্তৃক বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শনী শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এর আগে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শেখ রাসেল চত্বরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা। রোববার (২৬ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নগরের অস্থায়ী শহীদ মিনারে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতারা পুস্তস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নগর কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও চসিক কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি।
এছাড়াও নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়া উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেলাল হোসেন, শ্রমিক নেতা সফর আলী, যুবলীগ নেতা ইয়াছিন আরাফাতসহ নগর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, তা পূরণে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি, রাজাকার আলবদরদের তালিকাও দ্রুত প্রকাশ করে জাতির কাছে তাদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানান সিটি মেয়র।