বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় 'মিধিলি'র প্রভাবে ফটিকছড়িতে ঝোড়ো বাতাসসহ ভারী বৃষ্টিতে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। পাকা-আধাপাকা আমনের ধান নুইয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, সরিষা, ধনিয়া পাতা ও শাক-সবজিসহ পেপে, কুল, মাল্টা ও কলা ক্ষেতে পানি জমে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৮ টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভা মিলে চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। শীতের সবজির আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১৩২ হেক্টর জমিতে। অধিকাংশ ক্ষেতের আমন ধান এখনো কাঁচা। এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ জমির ধান কর্তন করা হলেও আমন ধান ও শীতকালিন সবজি মিলে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার পাইন্দং, কাঞ্চননগর, হারুয়ালছড়ি, ভুজপুর, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, খিরাম, ফটিকছড়ি পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বর্ষনে মাটিতে নুইয়ে পড়ছে শত শত হেক্টর পাকা, আধা-পাকা আমন ধান। এছাড়াও বীজতলায় পানি জমে বিনষ্ট হয়েছে শীতকালিন সবজি। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে কৃষকরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আমন মৌসুমের প্রায় ৮০ভাগ পাকা-আধপাকা ধানক্ষেত মাঠিতে নুইয়ে পড়েছে। ২০ শতাংশ জমির ধান কাটলেও বেশির ভাগই প্রায় পরিপক্ব। ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরো ধান ঘরে তোলার কথা। পাশাপাশি নিম্নাঞ্চলে বোরো চাষের জন্য চলছে বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি। তবে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বিভিন্ন উপজেলার আমন ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। আধাপাকা আমন ধান বিস্তীর্ণ মাঠে নুয়ে পড়েছে উল্লেখ করে দক্ষিন পাইন্দং এলাকার চাষী আবুল কালাম বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তোলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রাতভর বৃষ্টিতে ধান একদম নুয়ে পড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।’ হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের কৃষক মফিজ জানান, 'ঝোড়ো হাওয়ায় তার ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকদিন আগে ধান কাটা মাঠে শুকাতে দিয়েছি এরমধ্যে বৃষ্টিতে কাটা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।' আধা পাকা ধানের সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা পাইন্দং বেড়াজালী গ্রামের কৃষক মতি রহমান, আলী আহমদ, এনাম, কাজলসহ অনেকের। তারা বলছেন, আমন রোপনের শুরুতেই অনাবৃষ্টির কারণে সেচের মাধ্যমে চারা রোপন করতে হয়েছে। এ মুহূর্তে যে ধান পাকতে বাকি আছে, সেগুলোর পুরোটাই চিটা হয়ে যাবে।
দাঁতমারা ইউনিয়নে পাকা ও আধাপাকা আমন ধান, শীতকালিন শাক-সবজি, পেপে, কলা, বরইসহ মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, 'গত দুই দিনের ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।'
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, 'ঘুর্ণিঝড় মিধিলির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে এখনও কাজ করছে কৃষি বিভাগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করে এগুচ্ছে কৃষি। বহু ক্ষেতে আমন ধানের গাছ ভেঙে পড়েছে। অনেক আমন ক্ষেত ও সবজি ক্ষেতে পানি জমে আছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানসহ ফসলের ক্ষতি কম হবে জানান এ কর্মকর্তা।'
এছাড়া তিনি পড়ে যাওয়া ধানগাছকে আঁঠি বেঁধে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষকদের।