পাওনাদের নাম-ঠিকানা ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করেছে জয় চ্যাটার্জি (৪৯) নামের এক প্রধান শিক্ষক।
গতকাল ২৯ জুন (বুধবার) কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর ৫নং ওয়ার্ডের হাজী নুর আহমদ টাওয়ারের (৩য় তলার ৩০২) নিজ কক্ষে আনুমানিক ১২ টার দিকে তিনি আত্মহত্যা করছেন বলে ধারণা করছেন পুলিশ প্রশাসন।
তিনি উপজেলার চরলক্ষ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নে ও শান্তি প্রিয় চ্যাটার্জির একমাত্র পুত্র।
জয় চ্যাটার্জির আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনা সুলতানা, কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোলায়মান তালুকদার ও খোয়াজনগর ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেনসহ কর্ণফুলী থানার পুলিশ টিম। উনাদের উপস্থিতিতে বাসার দরজা ভেঙ্গে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে থাকা অবস্থা থেকে তার মরদেহ উদ্বার করা হয়।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের আত্মাহত্যার খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকগণ। সহকর্মীদের সূত্রে জানা যায়-২০০৬ সাল থেকে শিক্ষকতায় নিয়োজিত জয় চ্যাটার্জি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তাদের সংসার। ৬ মাসের মধ্যে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে উনি একাকিভাবে জীবন যাপন করতেন। একমাত্র বোন ছিলেন স্বামীর সংসারে।
ঘটনার জানাজানি : স্কুল বন্ধ থাকায় সকাল থেকে বের হননি জয় চ্যাটার্জি। দুপুরের সময় বাসার কাজের ভূয়া আসলে বার বার কলিং বেল বাজিয়ে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজায় স্ব-জোরে আঘাত করে। এরপরও দারজা না খুলায় তিনি বাড়ীর মালিককে বিষয়টি সম্পর্কে জানান। বাড়ির মালিক থানায় ফোন দিলে কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ ও এসআই আমির হোসেন নেতৃত্বে পুলিশ এসে লাশ ময়নাতন্ত্রের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রেরণ করেন।
এবিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ এর নিকট জানতে চাইলে উনি দৈনিক সাঙ্গুর প্রতিনিধিকে জানান ‘ঘটনার আলামত দেখে আমরা ধরনা করছি জয় চ্যাটার্জি মানসিক অশান্তির ও দেনার কারণে আত্মহত্যা করছেন ঘটনাস্থল থেকে একটি ডায়রি ও কিছু নগদ অর্থ সংগ্রহ করেছি। উনার বোনের উপস্থিতিতে লাশ ময়নাতন্ত্রের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।’ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় এখনও কোন মামলা করা হয়নি।
বোনের আহাজারী : বিকাল ৪.৩০ দিকে ভাইয়ের আত্মহত্যার সংবাদে ছুটে আসে একমাত্র ছোটবোন। এসময় তার কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। গাড়ি থেকে নামার সময় ভাই ভাই বলে আহাজারী করতে থাকে জয় চ্যাটার্জির ছোট বোন।
ডায়রি ও নগদ অর্থ সংগ্রহ : স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয় চ্যাটার্জি আত্মহত্যার সময় ডায়রিতে লিখে গেছেন পাওয়নাদারদের নাম-ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার ও টাকার পরিমাণ। মৃত্যুবরণকালে তিনি রেখে গেছেন ৬৬,০০০ (ছিষট্টি) হাজার (প্রায়) নগদ টাকা।