ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাগরের পানি স্বাভাবিক দিনের চেয়ে ৩-৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্রে ঢেউের আকার বৃদ্ধি ও উত্তাল থাকায় পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলেও সৈকত ছেড়ে যায়নি পর্যটক বা স্থানীয়রা। সংকেতের মধ্যেও লোকজনের ভিড় দেখা গেছে। তবে লাইফগার্ড ও সৈকতকর্মীরা পর্যটকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন, মাইকিংও করছেন। তবে নির্দেশনা না মেনে অনেকে সমুদ্রে নামার চেষ্টা করছেন। এজন্য টুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মাসুম বিল্লা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। এছাড়া গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত মানতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
কক্সবাজারের প্রধান আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ মিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আবদুল হামিদ মিয়া আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা-ঝোড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেইসঙ্গে ৪৪-৮৮ মিমি থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক নাফিস উদ্দীন বলেন, অনেক কষ্ট করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে আসছিলাম কিন্তু সাগরে নামতে দিচ্ছে না টুরিস্ট পুলিশ। তবে সাগরও খুবই উত্তাল রয়েছে। এই বিধিনিষেধ আমাদের নিরাপত্তার জন্যই তো দিয়েছেন।
কুমিল্লা থেকে আগত পর্যটক সুমি বলেন, সমুদ্রের ঢেউ যে এত বড় হয় এর আগে কোনো দিন দেখেনি। মনে হচ্ছে সাগরের মাঝে আছি। এই মুহূর্তে সাগরে না নামা বুদ্ধিমানের কাজ।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে পাঁচ লক্ষাধিক লোকের ধারণক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, ২৯৮ মেট্টিক টন চাল, ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং ১৮০ প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।