আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কক্সবাজার জেলায় মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধা লিঙ্গ বৈষম্য

ইমাম খাইর, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৮:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ নারী লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার। শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধা লিঙ্গ বৈষম্য। মেয়েদের শিক্ষার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়েদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোরী মেয়েরা স্কুল ছেড়ে চলে যায়। এমতাবস্থায় মেয়েদের শিক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বিপর্যস্ত অঞ্চলসমূহে মেয়েদের শিক্ষা প্রসারে সম্মিলিত উদ্যোগ বিষয়ক কর্মশালায় এসব কথা তথ্য ওঠে আসে।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শহরের তারকামানের আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন অংশীদারসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারগণ অংশগ্রহণ করেন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পপির নির্বাহী পরিচালক মুর্শেদ আলম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আলোচনা করেন, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে ফারুক আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন এবং মালালা ফান্ড বাংলাদেশের ইন-কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মোশাররফ তানসেন।

বাংলাদেশে জলবায়ু-সহনশীল নারী শিক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য মনোযোগ ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মত দেন বক্তাগণ।

তারা বলেন, পাঠ্যক্রমের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন শিক্ষাকে একীভূত, নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ উন্নতকরণ এবং সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলার উপযোগি করা দরকার।

বক্তাগণ দুঃখের সঙ্গে বলেন, সমাজে বিয়ের নামেই মেয়েদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। কম বয়সে বিয়ের প্রবণতা বেশি। যে কারণে সংসারে বিবাদ বিচ্ছেদ লেগে আছে। কমছে সামাজিক বন্ধন ও বন্ধুত্ব। মেয়েদের অনেকেই স্কুল পোশাক পরে ঢুকে বিয়ের পোশাকে বের হয়।

পুলিশ দিয়ে নয়, সামাজিক নিরাপত্তা দরকার। তাহলে আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি বাড়বে। প্রযুক্তির অপব্যবহার থামাতে হবে। সন্তানদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো দরকার। তারা মনে করেন, গণসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যম যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। তবে ১০০ খারাপ পত্রিকার চেয়ে ৪টা ভালো পত্রিকা অনেক ভালো।

কর্মশালায় বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুসন্ধানের সুত্র ধরে বাল্যবিবাহের একটি চিত্র উপস্থাপন করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ঈদগাঁও উপজেলায় বাল্যবিবাহ  বৃদ্ধির হার ৮২ শতাংশ। পরের অবস্থানে উখিয়া উপজেলায় ৭৫ শতাংশ। এছাড়া রামু ৭২, টেকনাফ ৬৬, মহেশখালী ৬১ , কুতুবদিয়া ৫৪, কক্সবাজার সদর ৫১, চকরিয়ায় ৩২ ও পেকুয়ায় ২৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য স্থানীয়দের অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপে জড়িত করে। টেকনাফ ও উখিয়ায় কাজের সন্ধানে গিয়ে মানুষ পাচারের শিকার হয়। মিয়ানমার সীমান্তে মাদক পাচারের রুটগুলি নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী আয়ের জন্য মাদক ব্যবসার আশ্রয় নিয়েছে, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

উল্লেখ্য, এডুকেশন চ্যাম্পিয়ন নেটওয়ার্কের সদস্য হিসেবে পপি ও ডিআরআরএ বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য জলবায়ু-সহনশীল শিক্ষার অগ্রগতির লক্ষ্যে এই কর্মশালার আয়োজন করছে। এই সহযোগিতামূলক উদ্যোগের লক্ষ্য অংশগ্রহণকারীদের একটি বৈচিত্র্যময় গ্রুপকে একত্রিত করা, তাদের জ্ঞান বিনিময়, সহযোগিতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের শিক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণের তাগিদ প্রদান করা।

বাংলাদেশের নারী শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর ও উন্নতির লক্ষ্যে একটি সহযোগিতামূলক উদ্যোগ-বাংলাদেশ এডুকেশন চ্যাম্পিয়ন নেটওয়ার্ক (ইসিএন)। মানসম্মত শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে সরকারি সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন অংশীদারসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করে ইসিএন কাজ করে যাচ্ছে ।

ইসিএন-এর লক্ষ্য জাতীয় নীতিকে সহযোগিতা করা এবং বাংলাদেশে জেন্ডার-সহায়ক, জলবায়ু-সহনশীল শিক্ষার ওপর আলোচনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মেয়েদেরকে ক্ষমতায়িত করা। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ এডুকেশন চ্যাম্পিয়ন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সহযোগিতা, জ্ঞান বিনিময় ও অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে, নেটওয়ার্কটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও উচ্চমানের শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে উপকৃত করবে।