আজ সোমবার ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬শে কার্তিক ১৪৩১

কক্সবাজারে বেপরোয়া মশা, অতিষ্ঠ পর্যটকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৮:২৮:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

 

পর্যটন জেলা কক্সবাজারে মশার দাপটে পর্যটকরা অতিষ্ঠ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে হোটেল পর্যন্ত সর্বত্র মশার উপদ্রব। সন্ধ্যার পর সৈকতে বসলে বা হোটেলে বারান্দায় দাঁড়ালে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হচ্ছে। এমনকি হোটেলে বসে খাওয়া-দাওয়ার সময় মশার যন্ত্রণায় পর্যটকরা অতিষ্ঠ। ঢাকায় ফিরে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। পর্যটকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই।

পর্যটকরা অভিযোগ করে বলেন, হোটেল রুমের মশার উপদ্রব ঠেকাতে হোটেলের স্টাফদের অনুরোধ করলে তারা মশা মারার স্প্রে রুমে দেয়। কিছুক্ষণ পর আবার মশা আক্রমণ শুরু করে। মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থাকলেও স্থানীয়রা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তবে হোটেল কর্মকর্তারা মশা ও মাছির উপদ্রপ বেশি বলে স্বীকার করেছেন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, পর্যটন জেলা কক্সবাজারে এ বছর এডিস মশার কামড়ে ১ হাজার ৯০২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ জন মারা গেছেন। গতকাল নতুন করে কক্সবাজারে ১৪ জন মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৫ জন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এ তথ্য জানা গেলেও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর নতুন করে প্রতিদিন অনেকই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আবার অনেকেই বাসা-বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতত্ত¡ বিশেষজ্ঞ খলিলুর রহমান বলেন, কক্সাজারে এডিস মশা ও কিউলেক্স উপদ্রব বেশি। সেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল। হোটেলগুলোর আশপাশে পানি জমে থাকে। ময়লা পানিতে কিউলেক্স মশার উপদ্র বেশি। ডোবা ও ড্রেনে মশার ওষুধ দেয়া বাড়াতে হবে। এ নিয়ে একাধিকবার হোটেল মালিক ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু মশার উপদ্রব এখনও কমেনি।

কক্সবাজার শহরের হোটেল ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে মশা বেশি। হোটেল-মোটেল জুনে মশারি টানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাই অনেক পর্যটক মশার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মশা মারলে পর্যটকরা উপকৃত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, প্রচণ্ড মশার উপদ্রব আছে এটা ঠিক। কিন্তু এর দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের। হোটেলগুলোতে মশারি টাঙানোর ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বললে কয়েল ব্যবহার করেন। আবার কেউ স্প্রে ব্যবহার করেন। এরপরও কাজ হচ্ছে না বলে অনেক পর্যটক অভিযোগ করেন।

সরেজমিন কক্সবাজার সুগন্ধা বিচ থেকে ঝাউবন হোটেল, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, বাহার ছড়াসহ হোটেল মোটেল জোনে বছরজুড়ে মশার উপদ্রব রয়েছে। মশার সঙ্গে মাছি ছাড়াও অন্যান্য পোকা আছে। হোটেলে খেতে বসলে হাতে মাছি বসে, পায়ে মশা কামড় দেয়। সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেলের বারান্দায় বসলে মশার কামড়ে হাত পা লাল হয়ে যায়। এরপর অনেকেই জ্বরে ও চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়। অনেকেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যান। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

গতকাল রাতে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন একটি অভিজাত হোটেলের এক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, মাঝেমধ্যে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ওষুধ দেয়। এরপরও মশার উপদ্রব আছে। হোটেলের পাশে বাগান ও ড্রেন, পাহাড় রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে মশার উপদ্রব বেশি বলে তিনি মনে করেন।

জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জনের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তাই তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এডিস মশায় কামড়ে আক্রান্তদের চিকিৎসকরা সর্বক্ষণ খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।