পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ছুটিতেও পর্যটকশূন্যতায় ভুগছে পর্যটন নগরী রাঙামাটি। কিছু মাস থেকে পর্যটকের যে খরা চলছিল সেই ক্ষতি ঈদে পুষিয়ে নেওয়ার আশা করলেও তা পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের।
সরেজমিনে রাঙামাটির প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে দেখা যায়, মোটামুটি লোক সমাগম থাকলেও তাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। অন্যান্য ঈদ মৌসুমে রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি থাকলেও এবারের চিত্র যেন সম্পূর্ণই বিপরীত। যেখানে পর্যটকদের চাপে হোটেল-মোটেলে রুম না পেয়ে রাস্তায় থাকার নজির রয়েছে, সেখানে আবাসিক হোটেলগুলোর প্রায় অর্ধেক খালি। নেই তেমন কোনো অগ্রিম বুকিংও। শহরজুড়ে লক্ষ্য করা যায়নি পর্যটকদের গাড়ির চাপ অথবা কাপ্তাই হ্রদে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়নি পর্যটকে পরিপূর্ণ টুরিস্ট বোট।
হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটি উপলক্ষ্যে আমরা সব সময় বাড়তি একটা প্রস্তুতি রাখি। কারণ এই সময়টাতে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয় রাঙামাটিতে। কিন্তু এবার আমরা খুবই হতাশ। যেমন পর্যটক আশা করেছিলাম তার অর্ধেক পর্যটকও আসেনি। আপাতত আমাদের হোটেলের ৬০ শতাংশের মতো বুকিং আছে। আগামীকাল সেটা আরও কমে যাবে।
হোটেল গ্রিন ক্যাসেলের ম্যানেজার মো. শরীফ বলেন, আমাদের এখানে মোট ৩৭টি রুম রয়েছে। এখন রুম খালি আছে ১৮টির বেশি। আমরা আরও বেশি পর্যটক সমাগম হবে বলে আশা করেছিলাম।
একই কথা বলেন হোটেল মতি মহলের স্বত্বাধিকারী মো. শফিউল নেজাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, ঈদের মৌসুম যেকোনো পর্যটন শহরের জন্য ব্যবসার মৌসুম। কিন্তু এবারের ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সত্যিই হতাশাজনক।
রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কাপ্তাই হ্রদ। বোটে করে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ না করলে রাঙামাটি বেড়াতে আসা যেন পূর্ণই হয় না। কিন্তু পর্যটকদের হতাশাজনক উপস্থিতির প্রভাব পড়েছে রাঙামাটির টুরিস্ট বোট সংশ্লিষ্টদের উপরও।
রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার এবং ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, ঈদের জন্য আমরা ভালো একটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আশা করেছিলাম ছুটিতে ভালো পর্যটক আসবে। কিন্তু আশা অনুযায়ী পর্যটক আসেনি।
রাঙামাটি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস গাইডের স্বত্বাধিকারী হিমু বাপ্পী বলেন, সচরাচর পর্যটন মৌসুমগুলোতে আমাদের বিভিন্ন রিসোর্ট ও কটেজের জন্য ভালোই বুকিং থাকে। কিন্তু এবার তেমনটা হয়নি। আমাদের বেশিরভাগ কটেজ এখনো বুকিং হয়নি। এদিকে ছুটি শেষ হয়ে গেলে আর বুকিং পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
সরেজমিনে রাঙামাটির টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতে দেখা যায়, বিক্রেতারা প্রায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। ক্রেতার সংখ্যা খুবই নগণ্য।
তন্তুজ টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী কল্পনা চাকমা বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটক আসবে সেই আশাতে দোকানে অনেক নতুন পণ্য ও আইটেম তুলেছিলাম। কিন্তু পর্যটকদের উপস্থিতি দেখে আমরা ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড হতাশ।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোক বিকাশ চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ ট্যুরিস্ট এসেছেন আমরা আশা করেছিলাম এর থেকে আরেকটু বেশি ট্যুরিস্ট আসবে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণেও আশানুরূপ পর্যটক হয়নি। ঈদের আগে আমাদের ৫০ শতাংশ বুকিং ছিল এবং বর্তমানে আমাদের ৬০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। আজ সরকারি ছুটি শেষ হয়ে গেলেও যেহেতু স্কুল-কলেজগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে তাই আশা করছি আগামী কয়েক দিনে পর্যটক উপস্থিতি আরও বাড়বে।