গণঅভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ও শাপলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল খালেকসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বনভোজনে মিলিত হয়েছেন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিকি মারমা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের দিনেশপুর গ্রামের পশ্চিমে নদী দখল করে বানানো ছেড়াদিয়া প্রজেক্টে এ বনভোজন আয়োজন করেন চেয়ারম্যান আবদুল খালেক। একজন বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তার বনভোজনের খবরে সবখানে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক চলছে।
তবে ইউএনও মিকি মারমার দাবি, আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত একটি অভিযোগের তদন্তে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ভোজনে অংশগ্রহণ করেন নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, শাপলাপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেক চৌধুরী। ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলবল নিয়ে নানান হুমকি দেয়াসহ আন্দোলন ধমানোর চেষ্টা করেছিল এই চেয়ারম্যান। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামিলীগের পতন হলে গা ঢাকা দেন চেয়ারম্যান খালেক।
তারা আরো জানান, গত বৃহস্পতিবার গোপনে বাড়িতে আসেন খালেক চেয়ারম্যান। শনিবার সকালে চেয়ারম্যানের উঠোনে সরকারি গাড়ি রেখে ইউএনও মিকি মার্মা নৌকায় করে খালেক চেয়ারম্যানের অবৈধভাবে দখল করা ছেড়াদিয়া প্রজেক্টে যান। সেখানে খালেক চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী হামিদা পারভিন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন, শাহাব উদ্দিন বাহাদুর, খালেকের ডানহাত ও বনখেকো শেফায়েত এবং খালেকের অবৈধ কাজের নিয়ন্ত্রক ইয়ার মোহাম্মদ গ্যাংয়ের সাথে বনভোজনে অংশ নেন ইউএনও মিকি মার্মা। সাথে ছিল ইউএনও অফিসের কয়েকজন স্টাফ।
এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অনেক নেতারা শুরু থেকেই অভিযোগ তুলছেন, শাপলাপুরের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক চৌধুরী ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় কক্সবাজার পৌরসভার গুনগাছতলায় ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন এবং সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।
বনভোজনে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মার্মা জানান, “খালেক চেয়ারম্যানের স্ত্রীসহ প্রজেক্ট দেখতে এসেছেন। সেখানে খাওয়া-দাওয়া করছেন।” ছাত্রদের উপর হামলাকারীর সাথে বনভোজনে কেন অংশ নিলেন সেই বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ইউএনও।
এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, অভিযোগের বিষয়ে তিনি খোঁজ নিচ্ছেন। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিবেন।
জানা গেছে, খালেক চেয়ারম্যান তালিকাভুক্ত নদী খেকো ও ভূমিদস্যু। শাপলাপুরে যার বিশাল বাহিনী রয়েছে। যাদের ব্যবহার করে পাহাড় কাটা, বনের গাছ পাচার, নদী দখল, সরকারী জমি আত্মসাৎ, প্যারাবন কাটা, বন্যপ্রাণী পাচারসহ একাধিক পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করেন এই বিতর্কিত চেয়ারম্যান। তার ডানহাত খ্যাত শেফায়েত অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন করাত কল।
আরো জানা যায়, খালেক চেয়ারম্যানের এইসব অবৈধ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মার্মা। পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ বন্ধে অভিযোগ দিলে খালেকের বিরুদ্ধে অভিযান চালান না তিনি। যার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা পান এই ইউএনও। আর এসব লেনদেনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন ইউএনওর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আবু বক্কর। যার বিরুদ্ধেও রয়েছে পরিবেশ ধ্বংসের অহরহ অভিযোগ।