আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা কমছে, দ্রুত গ্রেফতারও হচ্ছে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩১ মে ২০২২ ০৪:০০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

সরকারের পদক্ষেপের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, মামলা করলেও দ্রুত গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

মঙ্গলবার (৩১ মে) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মী আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ডাটা সুরক্ষা আইন নিয়ে আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যেসব জায়গায় সমস্যা আছে, সেখানে সেখানে সংশোধনের কথা জানিয়েছিল সরকার। সেটির অগ্রগতি কতদূর- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের রেসিডেন্স কো-অর্ডিনেটরের মাধ্যমে জেনেভায় জাতিসংঘের হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের অফিসের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা দুই পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের দিক থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে, তাদের দিক থেকে একটা কমিটি থাকবে। সারা বিশ্বের যে বেস্ট প্র্যাকটিস সেগুলো দেখবো। দেখার পর, কোনটা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রযোজ্য হয়, সেটা গ্রহণ করবো। আমরা লেজিসলেটিভ সচিবের নেতৃত্বে একটা কমিটি করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, তারা একটা বৈঠকও করেছেন। গত পরশু আমার সঙ্গে যে আলাপ হয়েছে, সেখানে শুনেছি শিগগির আরেকটি মিটিং হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, এই যে মিটিং চলছে, সেখানে কিন্তু এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এরপরও আপনারা যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে অপব্যবহারের কথা বলছেন সেটা কি চলতে থাকবে? সেজন্য আমরা অন্য একটি ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কোনো মামলা সরাসরি নেওয়া হয় না। এখন মামলা একটা নির্দিষ্ট সেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

‘আমার মনে হয় আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলাও কমে যাচ্ছে। আবার মামলা করলে দ্রুত গ্রেফতার করা হচ্ছে না।’

আনিসুল হক বলেন, আমরা যে অবস্থানটা নিয়েছি, এটা গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত যাচ্ছে। তাতে মিস ইউজ (অপপ্রয়োগ) এবং অ্যাবিউজ (অপব্যবহার) বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার এমন কোনো আইন করবে না, যে আইন স্বাধীন সাংবাদিকতা কিংবা স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্বকে খর্ব করে।

তিনি বলেন, আমরা জনগণকে সেবা করতে এসেছি। এর মাধ্যমে যদি কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি হয়, সেটা যদি জনগণ বলতে চায় আমরা সেটা শুনবো। প্রতিকারের প্রয়োজন হলে আমরা সেটা করবো।

ইউনূস (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) সাহেবের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা মামলা করেছিলেন। সেই মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। যে ৪৩৭ কোটি টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল সেটা ইউনূস সাহেব পরিশোধে রাজি হয়েছেন, সেই প্রেক্ষিতেই মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে কী গেছে- কার কত ক্ষমতা?' বলেই হেসে ফেলেন মন্ত্রী।

ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট

ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্টের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বলেছে। আমি অবহিত হয়েছি। আমি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আগামীকাল (১ জুন) আমি তার সঙ্গে বসবো। তিনিও বলেছেন আমরা এটা (ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট) পর্যালোচনা করবো।

তিনি বলেন, কথা উঠেছে এই (ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট) আইনটির বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়নি। আমি নিশ্চিত করবো স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যেন আলোচনা করা হয়।

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, সারা পৃথিবীতে ডাটা প্রটেকশন আইন নিয়ে কী কী আছে এটা পর্যালোচনা করার জন্য আমি সব আইন আনাচ্ছি। যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি।

গণমাধ্যমকর্মী আইন

আনিসুল হক বলেন, গণমাধ্যমকর্মী আইন সাংবাদিকদের জন্য দরকার রয়েছে। তারপরও এই আইনের বিষয়ে আপনাদের বক্তব্যটা যাতে দিতে পারেন সেটার জন্য আমি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা বলেছি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকেও আমি বলে দেবো যাতে তারা সাংবাদিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আইনটি পরিষ্কার করার কথা বলেন, বাতিল করার কথা বইলেন না। আইনটিতে আপনাদের সুবিধা হবে।’

আপনারা তিনটি আইনের কথা বলেছেন। এর সঙ্গে রয়েছে ওটিটি এবং বিটিআরসি রেগুলেশন। আমি সবগুলোর ব্যাপারে আলোচনার মধ্যে আছি, যোগ করেন আইনমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।