মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়াও সরকারী ছুটিসহ বিশেষ দিনে পর্যটক ভরপুর থাকে বান্দরবান জেলার অন্তত অর্ধশত পর্যটন স্পট। যার ফলে হোটেল,মোটেল,কটেজ ও পরিবহনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসা প্রতিষ্টান গড়ে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর ঈদের লম্বা ছুটিতে বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান গুলো প্রতিদিন হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠতো। বান্দরবান ভ্রমন উপলক্ষ্যে পর্যটকরা ঈদের প্রায় এক দেড় মাস আগেই বুকিং করে নিতেন অধিকাংশ হোটেল মোটেল ও কটেজ। তবে এ বছর তার ব্যতিক্রম। ঈদের ৩য় দিনেও খালি পড়ে আছে বান্দরবান জেলা সদর ও আলিকদম উপজেলার হোটেল-মোটেল ও কটেজ গুলো । জেলা সদরের নিকটবর্তী জনপ্রিয় পর্যটন স্পর্ট নীলাচল ও মেঘলায় তেমন পর্যটক চোখে পড়েনি।
বান্দরবানে গত প্রায় নয় মাস ধরে চলছে জঙ্গী ও কেএনএফ বিরোধী আইন শংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান। যার ফলে নিরাপত্তা বিবেচনায় গত নয় মাস ধরে জেলার রোয়াংছড়ি,রুমা ও থানছি উজেলায় পর্যটক ভ্রমনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন।
জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় গড়ে উঠেছে জনপ্রিয় পর্যটন স্পর্ট দেবতাকুম। রুমা উপজেলায় দেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ তাজিংডং,রহস্যময় বগালেক,বিঝুক ঝর্নাসহ অসংখ্য পর্যটন স্পর্ট। থানছি উপজেলায় রয়েছে প্রকৃতিক নৈর্সগিক দৃশ্য তমা তুঙ্গী,বড় পাথর,রাজা পাথর ও স্বচ্ছ জলধার নাফাকুম ঝর্নাসহ অসংখ্য পর্যটন স্পর্ট। আলিকদম উপজেলায় রয়েছে দাম তুয়া ঝর্না এবং মারাইতং জাদিসহ অসংখ্য পর্যটন স্পর্ট। বান্দরবানে এই চার উপজেলায় সব ছেয়ে সুন্দর ও আর্কষনীয় পর্যটন স্পর্ট গুলোর অবস্থান হওয়ায় এই চার উপজেলায় পর্যটকের সমাগম বেশী ঘটে থাকে। বান্দরবানের এই তিন উপজেলাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হলেও এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে জেলার অন্যান্য সকল পর্যটন স্পটের উপর। যার ফলে ঈদের লম্বা সরকারী ছুটিকে কেন্দ্র করে বান্দরবানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটাতে পনের দিন আগে থেকে ৫০% ছাড়সহ নানান সুযোগ সুবিধা ঘোষনা করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ৫০ শতাংশ ছাড় ঘোষনার পরেও ঈদের দিন থেকে (১জুলাই)শনিবারেও পর্যটকের তেমন সাড়া মেলেনি পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে।
ঢাকা থেকে বান্দরবানে বেড়াতে আসা সুফিয়া,কামাল হোসেন,অপুর্ব চৌধুরী জানান,
বান্দরবানের নীলাচলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তারা মুগ্ধ। এখানকার অপরূপ সৌন্দর্য তাকে বিমোহিত করেছে। ভাবতেই পারেননি বান্দরবান এত সুন্দর। এক সপ্তাহের ভ্রমন নির্ধারন করেই তারা বান্দরবানে এসেছিলেন। কিন্তু রোয়াংছড়ি,রুমা ও থানছি পর্যটক ভ্রমনের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা ফিরে যাবেন।
চট্টগ্রাম থেকে মেঘলায় বেড়াতে আসা পর্যটক তুহিন,সবুজ ও আরজু আহাম্মেদ জানান,আমরা প্রায় বছর ঈদের ২য় বা ৩য় দিনে বন্দু বান্ধবরা মিলে বান্দরবানে ঘুরতে চলে আসি। ঈদের ছুটিতে প্রতি বছর এসব পর্যটন স্পটে পর্যটকের ভিড় থাকে। কিন্তু এবারে তেমন পর্যটক দেখা যাচ্ছেনা। বান্দরবানের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল যাচ্ছেনা। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যটকদের মনে ভীতি সঞ্চার হওয়ায় পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে তার প্রভাব পড়েছে বলে তারা জানান।
বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোটেল অরণ্যর ব্যাস্থাপনা পরিচালক মো: জসিম উদ্দীন জানান, পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে নয় মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানে পর্যটকশূন্য । আমরা হোটেল ব্যবসায়ীরা লোকসানে আছি। পর্যটকদের কাছে টানতে ৫০% ছাড় ঘোষনা করার পরেও কাজ হয়নি। প্রায় সকল হোটেল,মোটেল ও কটেজের রুম খালি,কোন বুকিং নেই।
তারপরও আমরা পর্যটকদের বরণে সবসময় প্রস্তুত রয়েছি। তবে পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত হলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে বান্দরবান। সে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বলে তিনি জানান।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বান্দরবান জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত সকল দর্শনীয় স্থান গুলোকে সাজানো হয়েছে। পর্যটকরা সহজেই এবং নিরাপদে এসব স্পটে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এছাড়াও পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটাতে ঈদ উপলক্ষ্যে সকল পর্যটন স্পটে পর্যটকদের প্রবেশে ফি:২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।