হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড তুলাতল এলাকায় বেওয়ারিশ কবরস্থানের নাম দিয়ে জলাশয় ভরাট করার অভিযোগ স্থানীয়দের।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) দুপুর আড়াই টার দিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়ন পর্যায়ের মিনি স্টেডিয়ামের কাজ প্রায় শেষের পথে। হালদা নদী ঘেঁষে এই মিনি স্টেডিয়ামের আশেপাশে স্কেবেটর দিয়ে ৫ থেকে ৬টি জায়গায় ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আমাদের মৌরশী সম্পত্তির ঘর বাড়ি বন্যার সময় হালদা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের ঘর বাড়ি পানি নিয়ে গেলোও গাছপালা ছিলো। এরপর হালদা নদীর গতি পথ পরিবর্তন করে আমাদের অংশে ধীরে ধীরে বাঁধ দিতে দিতে জায়গায় ভরে যায়। এরপর আমরা রাস্তার ধারে অন্যের জায়গায় অস্থায়ী ঘর তৈরী করে বসবাস করি। আর অন্যান্যরা ভাড়া বাসায় বসবাস করি। তারপর আমরা আমাদের জায়গায় ক্ষেতখামার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। এমন সময় আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব দেখি আমাদের কে সেখানে কোন চাষাবাদ করতে নিষেধ করেছেন। তারপর সেখানে দেখি খেলাধুলার জন্য স্টেডিয়াম তৈরী করতে।
ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা বলেন, হালদার পাড়ের মানুষের মৌরশী সম্পত্তিতে চেয়ারম্যান সাহেব জোর করে খেলাধুলার স্টেডিয়াম তৈরী করছেন। আর তার সাথে জোট করে ফোরকান মেম্বার মাটি বিক্রি করছেন৷ এর আগে মাটি কাটার জন্য ফোরকান মেম্বার কে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড তাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। এখন আবারও সেই ফোরকান মেম্বার ও চেয়ারম্যান মিলে বেওয়ারিশ করবস্থানের কথা বলে জলাশয় ভরাট করেন। এখানে যেহেতু অন্য জেলা কিংবা উপজেলার লোকজন বসবাস করে না, তাহলে বেওয়ারিশ কবরস্থানের দরকার কি?
মিনি স্টেডিয়ামের ঠিকাদার ও একই ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ফোরকান বলেন, আমাদের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম বাসেক ভাইসহ ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে ওনার মৌখিক নির্দেশনায় মাটি গুলো বেওয়ারিশ কবরস্থানে জন্য নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও যারা মৌরশী সম্পত্তি দখল করে স্টেডিয়ামে তৈরীর অভিযোগ তুলেছেন তাদের কে কাগজ পত্র গুলো নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড মহোদয় এর কাছে জমা দিয়ে তাদের যদি ন্যায্য দাবী হয়, তাহলে তাদের জায়গায় ছেড়ে দেয়া যাবে।
গড়দুয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরওয়ার মোর্শেদ তালুকদার বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের এলাকাটা অনেক বড় এবং জনবহুল এলাকা তাই কবরস্থান প্রয়োজন। যারা এই কবরস্থানের জন্য কাজ করছেন তাদের কে ধন্যবাদ জানানো দরকার। এটি একটি মহৎ কাজ। প্রয়োজনে আপনি এসেই দেখে যেতে পারেন। আমাদের উপজেলায় এমন কোন জায়গায় নেই, যেখানে জলাশয়, পুকুর, খাল, বিল এমনকি কৃষি জমি ভরাট করে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। তবে এখানে তো সেটা হচ্ছে না, হচ্ছে তো কবরস্থান। এখানে একটি চক্র আছে শুধু ভালো কাজ করলেই বিরোধিতা করে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, বেওয়ারিশ কবরস্থানের বিষয়ে অবগত আছি। তবে জলাশয় কিনা সেটা জানি না। আমি তদন্ত করে দেখছি। যদি জলাশয় হয় তাহলে ভরাট করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী-বায়োজিদ সংসদীয় আসনে লাঙ্গলের সমর্থনে অবৈধভাবে প্রভাব কাটিয়ে নির্বাচন প্রচারণকালে ভোটারদের ভোট দিতে নিষেধ ও ভয় দেখানোর অপরাধে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পরান্টু চাকমা বাদী হয়ে হাটহাজারী মডেল থানায় গড়দুয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার মোর্শেদ তালুকদারের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গড়দুয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান গত ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মহতের বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ ভোটারদেরকে বলেন, ৫ জানুয়ারি তারিখের পরে উপর হতে নির্দেশ আসবে আনিস সাহেব পাশ করবে। ভোট দিলেও আনিস এমপি, না দিলেও এমপি আনিস সাহেব। ভোটারকে বাসায় নিয়ে বলেন, তোমরা আজতো কেটলীর পক্ষে মিটিং করেছ: কাল লাঙ্গলের পক্ষে মিটিংয়ে আসতে হবে বলে বক্তব্যের মাধ্যমে ভোটারদের অন্যায় প্রভাব বিস্তার ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট না দিতে প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে।
এনিয়ে কেটলি মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে তার নিযুক্ত প্রতিনিধি এডভোকেট নোমান চৌধুরী ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার মোর্শেদ তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।
অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৩ (২খ)/৭৭(১) (ক) (৩) (খ) এর অপরাধে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।