আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নেপথ্যে কারা!

হাটহাজারীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিতে ইউপি মেম্বারের ঘুষ বাণিজ্য,লিখিত অভিযোগ

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:৫৩:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

হাটহাজারীতে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিতরণে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।উপজেলার ১নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো:তারেকের বিরুদ্ধে এক ভুক্তভোগী সহ নানা হয়রানির শিকার হওয়া দুই ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে।তবে তার কোন সুরাহা পায়নি এ ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।এনিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি ধমকি দেয়ারও অভিযোগ তুলেন তারা।শুধু তাই নয় ওই ইউপি সদস্য আরো যারা আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছে তাদের অনেকের কাছ থেকে ২০হাজার করে টাকা করে দাবি করেন।অন্যতায় উপকারভোগীদের বরাদ্দের ঘর বাতিল করে দেবে বলেও হুমকি প্রদান করেন।এদিকে ওই ইউপি সদস্য তারেক সরকার কর্তৃক অসহায় দরিদ্র পরিবারদের মাঝে ন্যায্য মুল্যের যে টিসিবির কার্ড বিতরণ করছে বিনামূল্যে তার ওয়ার্ডে প্রতিটি কার্ড জনপ্রতি ৫০০টাকা হারে অর্থ নিচ্ছে।টাকা না দিলে কার্ড বাতিল করে দিচ্ছে বলেও একাধিক আশ্রয়ন প্রকল্পের ভুক্তভোগীরা জানান।

 

 

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ফরহাদাবাদ উদালিয়া গ্রামের এক ভূমিহীন দরিদ্র পরিবার আলী হোসেনের সাথে। গত ২২সালে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্ধের তালিকা প্রকাশ হলে সেখানে তার নাম আসে।তৎকালীন ইউপি সদস্য ইমরান এ তালিকা তৈরী করেন।কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী ৩নং ওয়ার্ডের নতুন ইউপি সদস্য তারেক দায়িত্ব পেলে বরাদ্দকৃত ব্যক্তিদের তালিকা দেখে ফোন করে আলী হোসেনকেও। ঘর পেয়েছে বলে বিভিন্ন খাতে কিছু খরচ বাবত ২০হাজার টাকা দাবি করেন আলী হোসেন থেকে মেম্বার তারেক। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বিনামূল্যে অসহায় ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারদের এই ঘরগুলি বিতরণ করছে।  এদিকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঘর দেবে বলে  ইউপি সদস্য তারেকের সাথে চুক্তি হয় আলী হোসেনের।তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরেও আশ্রয়ন প্রকল্পের মাহমুদাবাদ এলাকার ৭৩টি ঘর বুঝিয়ে দেয়ার পরেও তালিকাভুক্ত তিনজনকে ঘর বুঝিয়ে দেয়নি। তারমধ্যে  ইউপি সদস্যের সাথে অর্থ লেনদেন করেও  আলী হোসেন ঘর না পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ এমনটি অভিযোগ করেন পরিবারগুলো।

 

জানা যায়,আশ্রয়ন প্রকল্প-২এর আওতায় সারা দেশের ন্যায় হাটহাজারী উপজেলার ২৮১ টি ঘর নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।পৌরসভার আদর্শ গ্রামে ৪৮টি.আলমপুরে ৬৩টি, জঙ্গল চারিয়া ৭১টি,গুমানমর্দ্দনে ২৬টি,ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মাহমুদাবাদ ৭৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ভূমিহীন পরিবারদের এই ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়।এতে ইউপি সদস্য চেয়ারম্যান কাউন্সিলর সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা তদন্ত করে নিরপেক্ষভাবে ভূমিহীনদের মাঝে বন্টন করে।কিন্তু অধিকাংশ ঘরে ভূমিহীন পরিবারগুলো বসবাস করেনা বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়নের ব্যক্তিরা জানান। আবারও অনেকের জায়গা আছে সামর্থ  আছে এরকম পরিবারকেও ভূমিহীন হিসেবে ঘর দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।গত কিছুদিন আগেও পৌর এলাকার আদর্শগ্রামে নাছির নামের এক ব্যক্তি বরাদ্দ পাওয়া ঘর বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বরাদ্দকৃত ঘরগুলি কারা পেয়েছে তার কোন তথ্য প্রকাশ করেনা উপজেলা প্রশাসন।এটি নাকি তাদের ইন্টার্নাল বিষয়।যার কারণে আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর বরাদ্দের স্বজন প্রীতির অভিযোগ তুলেছে অনেকেই।সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেন সচেতন মহল।

 

এদিকে ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন উদালিয়া মাহমুদাবাদ গ্রামে গত ২২সালে আলী হোসেন,সবুরা খাতুন,মোছাম্মদ রাশেদা আকতারের ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ হলেও তাদের ঘর বুঝিয়ে পায়নি।তাদের নামের স্থানে অন্য পরিবারকে দিয়েছে ঘরগুলো এমনি অভিযোগ তাদের।এদের মধ্যে আলী হোসেন টাকা দিয়েও ঘর বুঝে না পাওয়ায় যখন অভিযোগ করলে ইউপি সদস্য তাকে হুমকি ধমকি প্রদান করেন।কিন্তু সহকারী কমিশনার ভুমি আবু রায়হান জানান,তাদের নামে কোন ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়নি।এ তালিকা কারা তৈরী করেছে এবং তালিকাতে দেখা যায় তাদের ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।তাহলে ভুক্তভোগীদের সাথে প্রতারণা করল কারা!ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থার দাবি জানান।

 

 

এ বিষয়ে ৩নং ইউপি সদস্য মো:তারেক জানান,আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ তুলেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা,ভিত্তিহীন।একটি চক্র নির্বাচনী প্রতিহিংসার কারনে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।আশ্রয়নের ঘর কাউকে দেয়া বা বাতিল করা ক্ষমতা আমার নেয়।আর অর্থ লেনদেনের কোন প্রশ্নই আসেনা।যারা বলেছে তালিকায় নাম আছে ঘর পাইনি সেটা আমি কি করে জানবো।তথ্য যাচাই করে উপযুক্ত ব্যক্তিদের ঘর বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

জানতে চাইলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.বি.এম মসিউজ্জামান মুঠোফোনে বলেন,এ বিষয়ে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।