চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ার নির্দেশনা মানেননি। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত কোনও শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করেননি। তবে আন্দোলন স্থগিত করেছেন। একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরতে চান তারা। আজ শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) শান্ত রয়েছে চুয়েটের পরিস্থিতি। আজ অবরোধ করা হয়নি চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক। এ কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়েটে একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভা বসে। সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে ছাত্রদের এবং শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশনা আসার পর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের কার্যালয়ের পাশাপাশি সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ২০ সদস্যের ছাত্রদের প্রতিনিধি।
সভায় শিক্ষার্থীরা বলেন, নিরাপদ সড়ক, চুয়েট হাসপাতালকে স্বয়ংসম্পন্ন করাসহ পেশ করা ১০ দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি চুয়েট এবং হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। তখন শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার ইচ্ছে পোষণ করেন।
সেখানে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১০ দফা দাবির সবটাই মেনে নেওয়া হয়েছে। চুয়েট এবং হল বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার শুক্রবার বিকালে সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে। এতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ সভার সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সুযোগ দেয় চুয়েট কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা আজ কোনও ধরনের বিক্ষোভ করেনি। তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে। তবে শিক্ষার্থীরা কেউ হল ত্যাগ করেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে এক বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বলেছেন তারা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে চায়। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল বন্ধের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিকালে সিণ্ডিকেট সভার আহ্বান করেছে। সিন্ডিকেট বৈঠক শেষে কী সিদ্ধান্ত আসছে তা জানা যাবে।
চুয়েট রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার বিকালে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেন। ছাত্রদেরকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে ও ছাত্রীদেরকে শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয় সেখানে।
এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট ছাত্র নিহত হন। আহত হন আরও এক ছাত্র।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- পুরকৌশল বিভাগের ২০২০ ব্যাচের ছাত্র শান্ত সাহা ও একই বিভাগের ২০২১ ব্যাচের তৌফিক হোসেন। এর মধ্যে শান্ত সাহা নরসিংদী সদরের কাজল সাহার ছেলে। তৌফিক হোসেন নোয়াখালী জেলার সুধারাম উপজেলার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
এ ঘটনায় আহত হন জাকারিয়া হিমু। তিনি পুরকৌশল বিভাগের ২০২১ ব্যাচের ছাত্র। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ দুর্ঘটনার পর থেকে নিরাপদ সড়কসহ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালককে গ্রেফতারের দাবিতে সড়ক অবরোধসহ আন্দোলন করে আসছিলেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুড়ছে শাহ আমানত পরিবহনের তিনটি বাস। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি যানবাহন। চার দিন ধরে চরম দুর্ভোগে পড়েন কাপ্তাই সড়কের যাত্রীরা।