প্রকৃতির চাদরে আবৃত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)। সবুজ বেষ্টিত এই একাডেমিতে দেশ-বিদেশের নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ এসে প্রশিক্ষণ নেন। আমরাও তাদের মতই আগন্তুক। ১৯৯৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের উদ্যোগে প্রতিবছরই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের এখানে দারিদ্র্য বিমোচন এবং পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সংযুক্তি কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০৯ সাল থেকে কোর্স পরিচালক অধ্যাপক আমীর মুহাম্মদ নসরুল্লাহ শিক্ষার্থীদের এখানে নিয়ে আসেন। ছাত্রছাত্রীরা প্রথম বর্ষ থেকেই অপেক্ষায় থাকে তৃতীয় বর্ষের এই অ্যাকাডেমিক ট্যুরের জন্য।
গতবছর অবশ্য করোনা মহামারীর কারণে ট্যুরটি না হলেও এবার বছরের শুরু থেকেই বার্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলছিল বিভাগে। অবশেষে জুনের ২৯ তারিখ বার্ডে যাওয়ার তারিখ ঠিক করা হয়। ফিরতে হবে জুলাইয়ের এক তারিখ। এক অর্থবছরে বার্ডে ঢুকে বের হবো পরের অর্থবছরে। ব্যাপারটা চমৎকার বটে।
যাই হোক, ট্যুরের জন্য টি-শার্ট, ক্যাপ, ক্রেস্ট তৈরি, টাকা সংগ্রহ, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সবকিছু চলছিলো ২৯ জুনের আগ পর্যন্ত। ২৯ তারিখ সকাল সাতটায় ক্যাম্পাস থেকে বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে। তবে ভোরে বৃষ্টির কারণে জিরো পয়েন্টে আসতে একটু দেরি হলো সবার। তিনটি বাসে কুমিল্লা যাবো আমরা। সকাল পৌনে আটটায় শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো বাসগুলো। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সাড়ে আটটার মধ্যে শহর থেকে যারা বাসে উঠবে সবাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মার্কেটের পাশের ফাঁকা জায়গায় এসে জড়ো হয়৷ বাস সেখানে পৌঁছানোর পর সবাইকে সকালের নাস্তা দেওয়া হলো- কেক, সন্দেশ, সমুচা, আপেল এবং পানি। এখানে নাস্তা শেষ করে আমরা রওনা হলাম কুমিল্লায় বার্ডের উদ্দেশ্যে। যানজট না থাকায় আমরা ১১টার মধ্যেই পৌঁছে যাই বার্ডে। আমাদের সঙ্গে নসরুল্লাহ স্যার ছাড়াও সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন আরও তিনজন শিক্ষক- মুহাম্মদ ইয়াকুব, রেজাউল করিম এবং আমিনা সাবরিন।
বার্ডে পৌঁছানোর পর সবাই লাইন ধরে হোস্টেল রুমের চাবি সংগ্রহ করলাম রিসিপশন থেকে। সবাই নিজেদের নাম এবং মোবাইল নম্বর জমা দিয়েই চলে যাই যার যার রুমে। তবে এখন আর বিশ্রামের সুযোগ নেই। রুমে ব্যাগটা রেখে কোনমতে ফ্রেশ হয়ে যেতে হবে লালমাই মিলনায়তনে। সেখানে একটু পরেই শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তবে হোস্টেলের রুমগুলো এতটাই ভালো লেগেছিলো যে, কিছুক্ষণ ঘুমানোর লোভ সামলানো কঠিন ছিলো। কিন্তু প্রথমদিনেই যদি কোনো নির্দেশনা অমান্য করে ঝামেলায় পড়ি, সেই ভয়ে তাড়াতাড়ি জিনিসপত্র রেখেই ছুটলাম অডিটোরিয়ামে।
আমাদের প্রশিক্ষণ পরিচালক আফরিন খান এবং নসরুল্লাহ স্যার শুরু করলেন উদ্বোধনী পর্বের কাজ। ততক্ষণে আমরা হাতে পেয়ে গেছি তিনদিনের পুরো কর্মসূচির একটি শিডিউল। সবাই নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করলাম। আমাদের কিছু মৌলিক নির্দেশনা দেওয়া হলো বার্ডের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য। এখানে করিডোরে হাটার সময় ডান পাশ দিয়ে লাইন ধরে হাঁটতে হয়। সময়মতো ক্যাফেটেরিয়ায় না গেলে খাবার পাওয়া যাবে না- এটাও বলে দেওয়া হয়েছে। এরপর দুপুরের খাবারের ছুটি। লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা ক্যাফেটেরিয়া থেকে খাবার নিলাম। বেশ মানসম্মত খাবার বলা যায়।