আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন নিয়ম-কানুন, লাগবে রেজিস্ট্রেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:২৮:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

আগামী মাস থেকে শুরু হচ্ছে পর্যটন মৌসুম। আর এই মৌসুমে পর্যটকবাহী জাহাজে করে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হয়। তবে এখন থেকে চাইলেই পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। সেখানে যেতে হলে মানতে হবে বেশ কিছু ভ্রমণের নতুন নিয়ম-কানুন। একই সঙ্গে করতে হবে বাধ্যতামূলক অনলাইন রেজিস্ট্রেশন। তবে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুট করে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

 

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন; যার সৌন্দর্য উপভোগে পর্যটন মৌসুমে ছুটে যায় হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু। এতে দ্বীপটি একটু একটু করে তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্বীপকে রক্ষায় নড়েচড়ে বসেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

 

 

এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করতে হলে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এছাড়া দ্বীপে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিও দিতে হবে। এমনকি দ্বীপে দিনপ্রতি সঠিক ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পর্যটক নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ।

 

তবে হুট করে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানালেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

 

পর্যটন ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন,

সেন্টমার্টিনে যদি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় তা চিন্তা-ভাবনা করেই করতে হবে। সেখানে পরিবেশও রক্ষা করতে হবে আবার পর্যটনকেও প্রাধান্য দিতে হবে। ঢালাওভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না। নাহয় বাংলাদেশের পর্যটনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসবে।

 

আবু তাহের আরও বলেন, সেন্টমার্টিনে বিধি-নিষেধ দেয়া হচ্ছে কিন্তু দ্বীপে ৮ হাজারের বেশি স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে। তাদের অধিকার রক্ষায় কী করা হচ্ছে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

 

পর্যটন ব্যবসায়ী এম হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, সেন্টমার্টিনে যেতে বাধ্যতামূলক অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ফি’র বিষয় নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এটা যেহেতু হঠাৎ করে গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত, তাই হুট করে প্রয়োগ করাটা ঠিক হবে না। ভ্রমণকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে পর্যায়ক্রমে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া নিবন্ধনের মাধ্যমে যদি সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে কক্সবাজারের পুরো পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

 

এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে। এছাড়া তাদের সহযোগিতা করবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। তবে প্রশাসন বলছে, এব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন,

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন হয়েছে এটা আমরা পেয়েছি। এখন এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা করছি না, কারণ আলোচনা করার সুযোগও আমাদের হয়নি। এই বিষয় নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করব।

 

ট্যুরিস্ট পুলিশ বলছে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সকলের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত বলে জানালেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

 

 

ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ডিআইজি মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, সেন্টমার্টিনের বিষয়ে সবস্তরের পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সেন্টমার্টিনগামী সব জাহাজ মালিকদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। যেহেতু আগামী মাস থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে। মূলত সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

 

 

 

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান কমোডর মো. নুরুল আবছার বলেন,

পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে গিয়ে যেখানে-সেখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলছে, পরিবেশ নষ্ট করছে, রাতের বেলা আলোকিত করে গান-বাজনা করছে। এতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন তার সৌন্দর্য হারাবে।

 

তিনি আরও বলেন, ছোট্ট একটা উদাহরণ হলো, দ্বীপে যে কাছিম ডিম পাড়তে আসে, তারা মানুষজনের যাতায়াত কম, শব্দ বা আলো কম সেখানে বসবাস করে। সেন্টমার্টিনে পর্যটকের আগমন বেশি, গান-বাজনা, দ্বীপে রাতের বেলা আলো জ্বালানোর কারণে কাছিম আর অবস্থান করছে না। ফলে সেন্টমার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। যার জন্য সরকারের এ উদ্যোগ। নিয়েছে পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন করে সেন্টমার্টিনে যেতে হবে। যাতে করে সীমিত সংখ্যক পর্যটক পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে যেতে পারে।

 

 

বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ১৭ বর্গকিলোমিটারের ক্ষুদ্র দ্বীপকে স্থানীয়রা বলে নারিকেল জিঞ্জিরা। দ্বীপটি একটু একটু করে তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। তাই দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এমন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।