আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাড়ে ৯ বছর পর চট্টগ্রামে আসছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৩৯:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

সাড়ে ৯ বছর পর বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামে আসবেন। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের শোভাযাত্রায় বন্দরনগরীতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।

 

 

এদিকে শোভাযাত্রাটি ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা’ করার প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের বিএনপি। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে বিএনপির কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) শোভাযাত্রা করার কথা ছিল।

 

কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে কর্মসূচি পিছিয়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২ টায় নগরের ওয়াসা মোড় জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদের সামনে থেকে শোভাযাত্রা করার ঘোষণা দেয়। শোভাযাত্রা শুরুর আগে সেখানে অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য দিবেন কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগরের নেতারা। নগরের ওয়াসা মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নগরের লালদিঘীর মাঠে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হবে। শোভাযাত্রায় চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাড়াও কক্সবাজার, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষীপুর জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা থেকে বিএনপি ও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যোগ দেবেন।  

এ বিষয়ে চানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মুক্ত পরিবেশে ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে শান্তিপূর্ণভাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছি। এবার নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই শোভাযাত্রা  সফল করতে কাজ করেছেন ও আমাদের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুতি নিয়েছেন। আশাকরি  স্মরণকালের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা হবে।

 

তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর আমরা কখনো ছিলাম ছোট কারাগারে অথবা বাংলাদেশ নামক ফ্যাসিবাদের বৃহৎ কারাগারে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের মধ্যদিয়ে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এই শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি দীর্ঘ সাড়ে নয় বছর পর চট্টগ্রামে বক্তব্য দিবেন, তা শোনার আগ্রহ নিয়েই গণতন্ত্রকামী মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নিবেন।  

 

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, অতীতের মতো বাধা না থাকায় ভয়-ডরহীনভাবে বাস-রেলে ও নৌ পথে অনেকটা রিলাক্স মুডে যেভাবে পারেন এই শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এটা আমাদের প্রাথমিক বিজয়। এখন আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে হবে। সেজন্য গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি এবং থাকব।

 

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লায়ন নাজমুল মোস্তফা আমিন বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডাকেই জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বিএনপির শতশত নেতাকর্মী জীবন উৎস্বর্গ করেছেন। বাকি নির্যাতনের কথা বাদ দিলাম। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

 

তিনি আরও বলেন, সুশৃঙ্খলভাবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি শোভাযাত্রায় অংশ নেবে, এই নির্দেশনাই নেতাকর্মীদের আমরা দিয়েছি। বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শোভাযাত্রার সমন্বয়কারীর সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছি, নেতাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আশাকরি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শোভাযাত্রায় অংশ নিবেন।

  

শোভাযাত্রার ওয়ার্ড বিএনপির প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও  ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক মশিউল আলম স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, ফিনিক্স পাখির মতো তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি জেগে উঠেছে। দেশনায়ক তারেক রহমান এখন নেতাকর্মীদের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শোভাযাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালনের জন্য ওয়ার্ডের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করে নির্দেশনাই দিয়েছি। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শোভাযাত্রায় অংশ নিবেন। গত ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছি, তা জানান দিতে মঙ্গলবার শোভাযাত্রায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো।

 

উল্লেখ্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার উত্তরা থেকে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। ওই বছর ৬২ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়। সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়। গত ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফিরেছিলেন।